বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বিশ্ব নবীর আগমনে, সুরভিত পরিবেশে পুলকিত বিশ্ব আজীবন সম্মাননা পেলেন জনাব ওসমান গণি ও শফিকুর রহমান মধু মিয়া বৃষ্টির ধারায় মুছে যাক “রোজা রাখি, আল্লাহর হুকুম পালন করি, নিজে সুস্থ থাকি অপরকে সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করি” মঙ্গলকাটা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ‘MCTC’র এক যুগ পূর্তিতে আনন্দ ভ্রমণ ফেনিবিল ও কোনাপাড়া সমাজকল্যাণ যুব সংঘের অমর একুশে উদযাপন ‘আব্দুল গণি ফাউন্ডেশন’ মেধাবৃত্তি পরিক্ষা-২২ এর বৃত্তি প্রাপ্তদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের ডলুরা বর্ডারহাটে অনিয়ম ও মাদক বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত তৃতীয় বারের মত অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দাখিল ২০০৪ ব্যাচ এর মিলনমেলা

মানবতা, মানবাধিকার, ইসলাম ও আমাদের পৃথিবী!

মানবতা, মানবাধিকার, ইসলাম ও আমাদের পৃথিবী!

মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম ::

বর্তমান সময়ে পৃথিবীর দিকে তাকালে মনে হয় মানবতা,মানবাধিকার নীরবে নিভৃত্তে কাদঁছে! পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশ গুলো ব্যস্ত নিজেদের শক্তিমত্তা দিয়ে সারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করতে। অপরদিকে মুসলিমদেশগুলো নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে অনৈক্য। এ অবস্থায় কিছু দৃশ্যের দিকে তাকালে মানুষ হিসাবে আমাদের কষ্ট পেতেই হয়। বিশেষ করে মায়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন,চিনে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর অমানবিক অত্যাচার,কাশ্মিরে নির্যাতন,ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও নির্যাতন।এ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে,সাম্প্রদায়িক হামলার মাধ্যমে সম্প্রতি নষ্ট করা হচ্ছে,আর আবু গারিব কারাগরের নির্যাতনতো আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানায়! সবাই বলে মানবাধিকারের কথা,কিন্তু নিজেদের স্বার্থে কেউই রাখে না সে কথা! পণ্যের ন্যায় মানুষও একসময় হয়ে পরে মেয়াদ উত্তীর্ণ,তখন থাকেনা তার শক্তি,ক্ষমতা ও দাম্ভিকতা,বরং হয়ে পরে অসহয়। তাই’তো বলাহয় পৃথিবীর শক্তিশালী জিনিসটির নাম হচ্ছে সময়। সময়ের ব্যবধানে আমরা হয়ে পরি অসহয়। পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে কিন্তু মানুষ সঠিকভাবে ধর্ম পালন না করার কারণে কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণ সাধনেই ব্যস্ত।আর ইসলামতো মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। মানুষকে ধর্ম,গোত্র,বংশ,সাদা- কালো দিয়ে পার্থক্য করা যাবেনা বরং সবাইকে মানুষ হিসাবে মানবিক আচরণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।মানলে শান্তি, না মানলে অশান্তি আর অশান্তি। মানবাধিকার হলো প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

মানবাধিকার শব্দটি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক আলোচিত বিষয়। জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদে বেশ কিছু কনভেনশন বা প্রস্তাবনা রয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) পর ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় League of Nations বা ‘জাতিপুঞ্জ’। এ সংস্থা উল্লেখযোগ্য কার্য বাস্তবায়ন করতে না পারায় ২য় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) গোটা বিশ্ব যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,চীন,রাশিয়া,ফ্রান্স রাষ্ট্রের উদ্যোগে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবরে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় ‘জাতিসংঘ’ গঠন করে। এরপর ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ’ নামে একটি ঘোষণা দেয়া হয়। যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট গৃহীত হয়। একই সাথে মানবাধিকার নিয়ে ইসলামের আলোকে মূল্যায়নও একন্ত প্রয়োজন। ‘মানবতা’ শব্দটির তাৎপর্য মানবতা শব্দের বিশ্লেষণে নিহিত। এই শব্দটি চারটি বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত। তা হচ্ছে মা+ন+ব+তা। এর মধ্যে চারটি বিষয় নিহিত আছে। যেমন মা=মানুষ ন=নীতি, ব=বাস্তবায়ন, তা=তাগাদা। অর্থাৎ মানুষের নীতি বাস্তবায়নের তাগাদাই হ’ল মানবতা। বিশেষ্যবাচক এ মানবাধিকার পদটিকে বিশ্লেষণ করলে পৃথক দু’টি শব্দ বেরিয়ে আসে। তার একটি হ’ল ‘মানব’ (HUMAN), অপরটি হ’ল ‘অধিকার’ (RIGHT)। অধিকার (Right) : ‘অধিকার’ শব্দটি ছোট হলেও এর গুরুত্ব ও প্রয়োগ বিশাল ও ব্যাপক। এ দিক থেকে মানবাধিকার হচ্ছে কতগুলো সংবিধিবদ্ধ আইন বা নিয়মের সমষ্টি, যা মানব জাতির সদস্যদের আচার আচরণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে বুঝায় এবং যা স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক আইন সমষ্টি দ্বারা সুরক্ষিত যা মৌলিক অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ধর্তব্য। জাতিসংঘের Universal Declaration of Human Rights এর ১ম অনুচ্ছেদে বলা আছে-

All human beings are born free and equal in dignity and rights.

অর্থাৎ ‘জন্মগতভাবে সকল মানুষ স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।

মানবাধিকারের প্রধান ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)কর্তৃক মদীনা সনদ ঘোষণার মধ্য দিয়ে। মদীনা সনদকে পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ লিখিত সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এ সনদে মোট ৪৭ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে যেগুলোতে মানবাধিকারের বিষয়গুলো সর্বপ্রথম সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করা হয়েছে। সনদে স্বাক্ষরকারী সকল সম্প্রদায় একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে এবং সব সম্প্রদায় সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।
সব নাগরিক পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। নাগরিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। সকল প্রকার রক্তক্ষয়, হত্যা ও ধর্ষণ নিষিদ্ধ। কোনো লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তার কারণে অপরাধীর সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না।দুর্বল ও অসহায়দের সর্বোতভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে। মদীনা সনদের দ্বারা গুলো থেকে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় ইসলাম মানবাধিকারের ব্যপারে সুষ্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে। ইসলামি শরিয়তের বিধানে মানবাধিকারসংক্রান্ত পাঁচটি প্রধান ধারা নির্ধারণ করা হয়েছে। যথা: জীবন রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, বংশ রক্ষা, জ্ঞান রক্ষা ও ধর্ম রক্ষা। মূলত মানবতার সুরক্ষা বা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাই ইসলামের মূল লক্ষ্য এবং মুখ্য উদ্দেশ্য। ইসলামের শিক্ষা হলো সব মানুষ একই উপাদানে তৈরি, সবাই এক আল্লাহর বান্দা। সব মানুষ একই পিতা–মাতার সন্তান; সব মানুষ একই রক্তে–মাংসে গড়া; তাই সাদা–কালোতে কোনো প্রভেদ নেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানবতার মুক্তির বার্তা নিয়েই এ জগতে এসেছিলেন। তিনিই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ বা অন্ধকার ও অজ্ঞানতার যুগে পাপাচার, যুদ্ধবিগ্রহ, সহিংসতা, শিশুহত্যা ও কন্যাশিশুকে জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়ার মতো অমানবিক প্রথার প্রচলন ছিল। ইসলামই কোরআন–সুন্নাহর বিধানে মানবতাবিরোধী সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধকে ‘কবিরা গুনাহ’ বা মহাপাপ রূপে আখ্যায়িত করেছে এবং এর জন্য দুনিয়ায় চরম শাস্তি ও পরকালে কঠিন আজাবের ঘোষণা দিয়েছে।

ইসলাম ইবাদতে যেমন নারী ও পুরুষকে সমমর্যাদা দিয়েছে, সম্পদের দিয়েছে যথার্থ অধিকার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তাদের নারীদের জন্যও রয়েছে অধিকার, যেরূপ রয়েছে তাদের কর্তব্য।’ (সুরা: ২ বাকারা, আয়াত: ২২৮)।

অন্যত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এই কারণেই বনি ইসরাইলের প্রতি আমি এই বিধান দিলাম যে নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্য করা; হেতু ব্যতীত কেহ কাহাকেও হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল, আর কেহ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সুরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ২৭)।

পবিত্র কুরআনুল কারীমে আরও এসেছে-
‘আল্লাহ তাআলা (সৃষ্টিতে ও গুণাবলিতে) তোমাদের একের ওপর অন্যের যে প্রাধান্য দিয়েছেন তা দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব জাহির কোরো না। প্রত্যেক পুরুষ তাই পাবে, যা সে অর্জন করে এবং প্রত্যেক নারী তা পাবে যা সে অর্জন করে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সকল বিষয়ে অবগত আছেন।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩২)। শিক্ষায়ও নারী-পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইলম শিক্ষা করা সকল নারী ও পুরুষের ওপর ফরজ কর্তব্য।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)।

মানবাধিকার নিয়ে ৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্যের রাজা দ্বিতীয় সাইরাস যিনি সাইরাস দ্য গ্রেট’নামে সমধিক পরিচিত যিনি ব্যাবিলন আক্রমণ করেন। ব্যাবিলন আক্রমণের পর তিনি ব্যাবিলনীয়দের দ্বারা নির্যাতিত দাস জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করে দেন। তাদের নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনেরও ব্যবস্থা করে দেন। অতঃপর সাইরাসের নির্দেশে একটি সিলিন্ডার তৈরি করা হয়। যা সাইরাস সিলিন্ডার নামে অভিহিত। এতে সাম্রাজ্যজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা ও মানবাধিকার বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এটিই বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার সনদ।

মানবাধিকারের ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে ম্যাগনা কার্টাকে একটি মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি মানবাধিকারের মহাসনদ হিসেবে ইতিহাসে অভিহিত। এটি ছিলো মূলতঃ ইংল্যান্ডের রাজা জন ও ধনী বিত্তশালী ব্যারনদের মধ্যে ১২১৫ সালে সম্পাদিত একটি চুক্তি। এতে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিলো যে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাউন্সিলের পূর্ব অনুমতি ব্যতিরেকে খামখেয়ালীভাবে জনগণের উপর কর আরোপ করা যাবেনা। রাজকর্মকর্তারা যথেচ্ছভাবে জনগণের ভূ-সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারবে না।ব্যাবসায়ীরা রাজ্যের মধ্যে ইচ্ছেমতো একস্থান হতে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারবে। কোনো স্বাধীন মানুষকে বিচারিক রায় বা দেশীয় আইনানুযায়ী ব্যতীত গ্রেপ্তার, কারারুদ্ধকরণ, সম্পত্তিচ্যুত, দীপান্তরিত বা নির্বাসিত কিংবা হয়রানির শিকার করা যাবে না।

এই ম্যাগনা কার্টা চুক্তির মধ্য দিয়েই সংসদীয় গণতন্ত্রের পাশাপাশি আইনের শাসনের ধারণার যাত্রাও শুরু হয়। এই ঐতিহাসিক সনদেই বিশ্ব ইতিহাসে সর্বপ্রথম ঘোষণা করা হয় কোনো দেশের রাজাসহ সে দেশের সকলেই রাষ্ট্রীয় আইনের অধীন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। প্রজাদের অধিকার ও রাজার ক্ষমতা হ্রাসের যৌক্তিক এ দলিল পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বহুদেশে মানবাধিকার ও জনগণের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক হিসেকে কাজ করেছে।

পিটিশন অব রাইটস সম্পাদনা
১৬শ শতকে ব্রিটিশ জনগণের আন্দোলনের ফলে প্রথম যে তাৎপর্যপূর্ণ দলিলের সৃষ্টি হয় তা পিটিশন অব রাইটস নামে অভিহিত। ১৬২৮ সালে পিটিশন অব রাইটস সংসদ কর্তৃক আইনের আকারে গৃহীত হয়েছিলো। পার্লামেন্টের সম্মতি ছাড়া করারোপ, বিনা অপরাধে কারারুদ্ধকরণ, ব্যক্তিগত বাসস্থানে স্বেচ্ছাচারী অনুপ্রবেশ এবং সামরিক আইনের প্রয়োগ থেকে জনগণকে সুরক্ষা প্রদান করেছিলো মানবাধিকারের এ গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি।

বিল অব রাইটস সম্পাদনা
১৬৮৯ সালে বিল অব রাইটস ব্রিটিশ পার্লমেন্টে গৃহীত হয় ও বিধিবদ্ধ আইনে রূপান্তরিত হয়। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক ভল্টেয়ারের মতে, বিল অব রাইটস প্রত্যেক মানুষকে সেই সমস্ত প্রাকৃতিক অধিকার পুনরুদ্ধার করে দিয়েছে যেগুলো থেকে তারা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন শাসক থেকে বঞ্চিত ছিলো। যেমনঃ জীবন ও সম্পত্তির পূর্ণ স্বাধীনতা, লেখনী দ্বারা জাতির নিকট কথা বলার অধিকার, স্বাধীন লোকদের দ্বারা গঠিত জুরি ছাড়া আর কারো দ্বারা ফৌজদারী অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন না হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে যেকোনো ধর্ম পালনের স্বাধীনতা। শুধু তাই নয়, বিল অব রাইটস ঘোষণা করে, পার্লামেন্টের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে রাজা যদি কোনো আইনকে স্থগিত বা ভঙ্গ করেন অথবা রাজা তার খরচের জন্য ইচ্ছেমত করারোপ করেন বা রাজ-কমিশন বা রাজ-আদালত গঠন করেন তাহলে এগুলো হবে বেআইনি ও ধ্বংসাতক।

১৯৯০ সালে মিশরেরর কায়রোতে ইসলামে মানবিাধিকার বিষয়ক কায়রো ঘোষণায় ইসলামী দৃষ্টিতে মানবাধিকারের উপর একটি সাধারণ আলোচনা করা হয় এবং ইসলামী শরীয়াহকে এর একমাত্র উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই সভায় ঘোষণায় করা হয় যে, এর উদ্দেশ্য হবে “মানবাধিকারের ক্ষেত্রে ওআইসিভুক্ত সদস্যগুলোর জন্য সাধারণ নির্দেশনা”। “মানুষের পদমর্যাদার ভিত্তিতে সকল মানুষই সমান” (কিন্তু “মানবাধিকারের” ক্ষেত্রে সমান নয়) স্বীকৃতির মাধ্যমে এই ঘোষণার শুরু হয় এবং “জাত, বর্ণ, ভাষা, বিশ্বাস, লিঙ্গ, ধর্ম, রাজনৈতিক পরিচয়, সামাজিক পদমর্যাদা বা অন্যান্য বিবেচনার মাধ্যমে” বৈষম্য সৃষ্টি করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। “মানবজীবন রক্ষা”, “গোপনীয়তার অধিকার”, “বিবাহের অধিকার”, “জোরপূর্বক ধর্মান্তর করা নিষিদ্ধ”, “অযৌক্তিকভাবে আটক এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ” ইত্যাদির মত বিষয়গুলো উপর এই ঘোষণায় বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে। এই ঘোষণায় যতক্ষণ না দোষ প্রমাণিত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত নির্দোষ হিসেবে বিবেচনা করা এবং পূর্ণ স্বাধীনতা ও আত্মসিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ের উপরও সুনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

সর্বপরি বলাযায়,মানবতা,মানবাধিকার রক্ষায় ধর্ম,গোত্র,বংশ,ক্ষমতা,বিবেচনা না করে ধর্ম ফলো করাই একমাত্র সমাধান।

লেখক :: মো.আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম :: কলামিস্ট, আইনজীবী ও জিও পলিটিক্স বিশ্লেষক।


আপনার এ্যাড দিন

ফটো গ্যালালি

Islamic Vedio

বিজ্ঞাপন ভিডিও এ্যাড




© All rights reserved © 2018 angina24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com