বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন
মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম ::
পুষ্টি ভাবনা থেকে এই ফল দু’টি নিয়ে লেখা।প্রথমেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের একটি অনুচ্ছেদ দিয়ে শুরু করা যাক ” জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবে…১৮(১), এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, রাষ্ট্র তার নাগরিকদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার ব্যাপারে কর্তব্য পরায়ন।
আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন তা হলো- কর্তব্য অবশ্যই পালনীয় আর ক্ষমতা প্রয়োগ করতেও পারেন নাও পারেন। পুষ্টি চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে ভিটামিন সি অন্যতম। এই ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ এবং উন্নত মানের আচার তৈরীর দুটি ফল বাংলাদেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলায় ব্যাপক হারে দেখা যায়। অথচ শুধু মাত্র সুপরিকল্পনার অভাবে লক্ষ লক্ষ টন এই ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপকূলের প্রিয় এই টক ফল ” ছইলা ও কেওড়া” বলার সাথে সাথেই হয়ত অনেকের জিহ্বায় পানি এসে গেছে তাই না! কারো না আসলেও আমার জিহ্বায় ঠিকই পানি এসে গেছে, এই ফল দু’টির সাথে আমার ছোটবেলা থেকেই পরিচয়। উপকূলীয় জেলার লোকদেরকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মনে হয় প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে মাধ্যমিক লেভেলে পড়ার সময় ক্লাশ থেকে ফেরার পরে দুপুরের রৌদ্রের সময় এ ফলদুটি যেন অমৃত ছিল। হালকা সিদ্ধ করে লাল মরিচের গুড়া, লবণ এবং সরিষার তৈল দিয়ে মাখানো সেই স্বাদ আজও ভুলার নয়!!
আমি অনেক দিন থেকেই এ ফলগুলো নিয়ে ভাবছি যে, উপকূলের এ ফল দুটিকে ব্যবহার করেতো আমরা উন্নত মানের আচার তৈরী করতে পারি। লক্ষণীয় বাংলাদেশের প্রতি ৬জন নাগরিকের মধ্যে একজন অপুষ্ঠির শিকার। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত ২০৩০ সালের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রার (এসডিজি) এর প্রতিও প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।
এসডিজি এর দ্বতীয় লক্ষ্য হচ্ছে “দারিদ্র্য নির্মূল,খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও উন্নত পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং টেকসই কৃষি এগিয়ে নেয়া। তাহলেতো আমাদের হাতে থাকা এরকম দুটি ফলকে কাজে লাগিয়ে পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করতে পারি। বাংলাদেশ অপুষ্টির ব্যাপার জিরো টোলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে। যাতে শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই যেন অপুষ্টির শিকার না হয়। এলক্ষ্যে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি এবং মাননীয় স্বস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রীকে সহ-সভাপতি করে জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (BNNC) পুনর্গঠন করে। তাহলে কেন আমরা হাজার হাজার টন এ ফল নষ্ট করছি? আমরাতো এ ফল দুটিকে ব্যবহার করে বড় বড় আচারের ফ্যাক্টরী তৈরী করে এর মাধ্যমে আচারের দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। একদিকে আমাদের ভিটামিনের চাহিদা যেমন পূরণ করবে, তেমনি ভাবে আমাদের যুবক সমাজকে কাজে লাগিয়ে বেকারত্ব মোচনেরও মোক্ষম হাতিয়ার হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা পেলে আমি এ দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের মোট বনভূমির পরিমান বন অধিদপ্তরের তথ্য মতে ৪,৬৫২,২৪৯.৮৫ একর। দেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনভূমি থাকা প্রয়োজন ২৫% আছে ১৭%।উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর বনাঞ্চল আছে ১০ টি জেলায়।
জাতীয় বন নীতি প্রনয়ণ হয় ১৯৭৯ সালে। বাংলাদেশের বনভূমিগুলো চার ধরণের ক. পাহাড়ি বনাঞ্চল ( ১৪লাখ ৬৬ হাজার ৯৩৫ একর), খ. ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ( ১৪ লাখ ৫ হাজার একর) , গ. সমতল (২ লাখ ৮১ হাজার ৯৫৩ একর) ঘ.গ্রামীণ।
বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ১৯৬৬ সালে উপকূল ও উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চলে ম্যানগ্রোভ গাছপালা লাগানো শুরু হওয়ার পর ইতোমধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বনায়ন সম্পন্ন হয়েছে। শুধু ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে জানমাল রক্ষার জন্যই নয়, নতুন কর্মসংস্থান ও অর্থকরী পণ্য হিসেবে এখানে উৎপন্ন কাঠের জন্যও কর্ম উদ্যোগটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
এ নতুন আবাদে লাগানো হয়েছে মূল্যবান ম্যানগ্রোভ প্রজাতি: কেওড়া (Sonneratia apetala), ছইলা,বাইন (Avicennia officinalis), সাদা বিনা (A. marina), বড় বিনা (A. alba), আমুর (Amoora cucullata, Bruguiera sexangula), গেওয়া (Excoecaria agallocha), পশুর (Xylocarpus mekongensis), সুন্দরি (Heritiera fomes), গরান (Ceriops decandra), এবং গোলপাতা (Nypa fruticans)। এগুলির মধ্যে কেওড়া ও ছইলার ক্ষেত্রে আবাদে যথেষ্ট পরিমাণ সুফল পাওয়া যায়। তাহলে কেন আমাদের এই সম্পদকে কাজে লাগাতে পারছি না?
সর্বোপরি আমরা বলতে পারি সম্পদ আমাদের এবং কাজে লাগানোর কৌশলও বের করতে হবে আমাদের।
লেখক : মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম: কলামিস্ট, শিক্ষাগুরু, প্রাবন্ধিক, আইনজীবী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সমাজকর্মী ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা।