বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন
হোসাইন আহমদ (নোবিপ্রবি)
সভ্যতা ও সামাজিক অগ্রগতির মূল অনুঘটক শিক্ষা।মানুষের জ্ঞান ও চিত্তের উৎকর্ষের জন্য, চরিত্র গঠন ও মানবীয় মূল্যবোধের জন্য, সর্বোপরি মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য শিক্ষাই হচ্ছে প্রধান নিয়ামক।বিখ্যাত চীনা দার্শনিক কুয়ানৎসু বলেছিলেন ‘যদি এক বছরের পরিকল্পনা মতো ফল পেতে চাও শস্য রোপণ কর, যদি দশকের ফল পেতে চাও বৃক্ষ রোপণ কর, যদি সমগ্র জীবনের জন্য পরিকল্পনা করে ফল পেতে চাও তবে মানুষের সুশিক্ষার ব্যবস্থা কর।’
এ বিশ্ব বৈচিত্র্যপূর্ণ। সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জাতিগুলোর সহযোগিতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই সুখ ও সমৃদ্ধি অর্জনের একমাত্র পথ। প্রতিযোগিতামূলক এ বিশ্বে অস্তিত্বসচেতন ও বাস্তবমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সঠিক ও বাস্তবমুখী শিক্ষা আমাদের অসত্য, অন্যায় এবং সব ধরনের নেতিবাচকতা থেকে বিরত রাখে এবং মানবিকগুণে গুণান্বিত একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। এ প্রসঙ্গে নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, Education is the most powerful weapon which you can use to change the world.
শিক্ষা মানুষের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত করে। শিক্ষা কেবল সনদ অর্জন বা ভালো পেশায় নিয়োজিত হতে সাহায্য করে না, বরং মৌলিক জ্ঞানে জ্ঞানালোকিত একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। সংস্কার ও কুসংস্কারের পার্থক্য তার মানসলোকে পরিষ্কার ও পরিস্ফুট হয়। সব ধরনের কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে থেকে নিজের অর্জিত জ্ঞান ও স্বীয় প্রতিভার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে অংশ নিতে শেখায়। অজ্ঞতা, অজানাকে জানার অভাব, কুসংস্কার ইত্যাদির কারণে আমরা সমাজে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। শিক্ষা আমাদের সব রকম সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। কেননা শিক্ষিত মানুষ ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে পারে, যে কোনো সমস্যায় নিজের অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত সমাধানের চেষ্টা করে, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূরীভূত করার মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
মানুষের মনকে বিকশিত করে সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টির ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকাই অগ্রগণ্য। দারিদ্র্যকিষ্ট সমাজের জনগণের শিক্ষার হার অত্যন্ত কম। শিক্ষার এ হার বৃদ্ধিতে দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠন একান্ত প্রয়োজন। একমাত্র শিক্ষাই পারে দরিদ্রের ভাগ্য পরিবর্তন করতে। কেননা শিক্ষার সাহায্যে যে কোনো প্রতিকূলতা অতিক্রম করা যায়। এক বিখ্যাত লেখকের মতে,Education is often understood as a means of overcoming handicaps, achieving greater equality, and acquiring wealth and status for all”. বিশ্বের কোনো কোনো সফল মানুষের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা অনেকেই খুবই অসচ্ছল পরিবার থেকে সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছেছেন। তারা তাদের একমাত্র অদম্য ইচ্ছাশক্তির দ্বারা শিক্ষার আলোয় নিজেদের আলোকিত করেছেন। ভারতের মিসাইলম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আবদুল কালামের কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি অতি দরিদ্র মৎস্যজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় তার ও তার পরিবারের অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করতে ছোটবেলায় তাকে পত্রিকার হকারের কাজ পর্যন্ত করতে হয়েছিল। দরিদ্রতা তার ইচ্ছাশক্তি এবং পড়াশোনার আগ্রহের কাছে হার মেনেছিল। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম এবং একনিষ্ঠ অধ্যবসায়ের কারণে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, সম্মানিত হয়েছিলেন তার আপন কর্মক্ষেত্রে এবং হয়েছিলেন সবার জন্য অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের একজন। তার মতো আমরাও শুধু শিক্ষার মাধ্যমেই দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বে নিজ স্থান প্রতিষ্ঠা করতে পারি।