বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা বিশ্ব নবীর আগমনে, সুরভিত পরিবেশে পুলকিত বিশ্ব আজীবন সম্মাননা পেলেন জনাব ওসমান গণি ও শফিকুর রহমান মধু মিয়া বৃষ্টির ধারায় মুছে যাক “রোজা রাখি, আল্লাহর হুকুম পালন করি, নিজে সুস্থ থাকি অপরকে সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করি” মঙ্গলকাটা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ‘MCTC’র এক যুগ পূর্তিতে আনন্দ ভ্রমণ ফেনিবিল ও কোনাপাড়া সমাজকল্যাণ যুব সংঘের অমর একুশে উদযাপন ‘আব্দুল গণি ফাউন্ডেশন’ মেধাবৃত্তি পরিক্ষা-২২ এর বৃত্তি প্রাপ্তদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের ডলুরা বর্ডারহাটে অনিয়ম ও মাদক বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

ডা. আকাশের আত্মহত্যা এবং গণমাধ্যমে মিতু

ডা. আকাশের আত্মহত্যা এবং গণমাধ্যমে মিতু

স্টালিন সরকার:

চট্টগ্রামের মোস্তফা মোরশেদ আকাশ (৩২) নামের এক চিকিৎসকের আত্মহত্যা নিয়ে তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। বøক ফেসবুক টুইটারে তেমন সেল্ফ-সেন্সর নেই; কিন্তু গণমাধ্যম? গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। মিডিয়ায় আত্মহত্যাকারীর স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর ছবিসহ যে রগরগে খবর প্রচার হচ্ছে; তা কি গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা প্রশ্নের মুখোমুখি করে না? 


ডা. আকাশের আত্মহত্যার জন্য দায়ীদের অবশ্যই বিচার হবে। কিন্তু বিচারের আগেই একজন নারীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা সাংবাদিকতার নৈতিকতার মধ্যে কি পড়ে? মিতু যদি আপনার মেয়ে-বোন হতো তাহলে? আত্মহননকারী ডা. আকাশ ও অভিযুক্ত ডা. মিতু বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবি। তাদের অবক্ষয়ের মূলে রয়েছে প্রগতিশীলতার নামে যাপিত জীবনে ধর্মহীনতা, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধর্মহীনতার সংস্কৃতি চর্চার পৃষ্ঠপোষকতা, অসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব, সর্বগ্রাসী অশ্লীলতা। এটা কি কেউ খতিয়ে দেখেছে?

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক আকাশ আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে দু’টি স্ট্যাটাসে মৃত্যুর জন্য স্ত্রী মিতুকে দায়ী করেন এবং সবিস্তারে ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি স্ত্রী মিতুকে ‘চিটার’ উল্লেখ করেন এবং লেখেন ‘ভালো থেকো আমার ভালোবাসা, তোমার প্রেমিকদের নিয়ে।’ ডা. আকাশ ও ডা. তানজিলা কয়েক বছর প্রেম করার পর ২০১৬ সালে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের যাপিত জীবনের কারণেই অবিশ্বাস ও সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আত্মহত্যার আগের রাতেও আকাশের সঙ্গে স্ত্রী মিতুর কথাকাটাকাটি হয়। ভোরের দিকে মিতু তার বাবার বাড়ি চলে যান। আকাশ স্ট্যাটাস দিয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে আত্মহত্যা করেন। খবরে প্রকাশ, আকাশের সঙ্গে বিয়ের আগে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন মিতু। বিয়ের পরও নানাজনের সঙ্গে সেই সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। এমনকি পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় অবস্থানকালেও একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক করেন। মিতুর উগ্র জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে মিডিয়ায়।

পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর মিতু স্বামীর অভিযোগের বিষয়ে কিছু স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ এ তথ্য দিয়েছে। আকাশের আত্মহত্যার পর মানসিক নির্যাতনসহ নানান অভিযোগ তোলা হয় মিতুর পরিবারের বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, আকাশের আত্মহত্যার জন্য যতটুকু মিতু দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী তার পরিবার। তাদের অমানুসিক নির্যাতনের কারণেই আকাশ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। গণমাধ্যমে অনেক তথ্য প্রকাশ হচ্ছে নিত্যদিন। খবরের সঙ্গে আকাশ ও মিতুর নানা ধরনের ছবি ছাপা হচ্ছে; যা অভিযুক্ত মিতুকেও মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে।


এদিকে মিতুর একটি বক্তব্য ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ২৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মিতু নিজের মুখে স্বীকার করেছেন নিজের বিবাহবহির্ভূত একাধিক সম্পর্কের কথা। ভিডিওতে দেখা যায়, মিতুর মুখের এক কোণে রক্তের দাগ এবং মারধরের চিহ্ন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে মিতুকে বলতে শোনা যায়, ‘প্যাটেলের সঙ্গে এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফায়ার ছিল, আমি শোভনের সঙ্গে, মাহবুবের সঙ্গে হোটেলে গেছি বিয়ের আগে, আকাশের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থায়ই।’ 


এই আকাশ বা মিতু যেন আমাদের বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবি। দীর্ঘতিন প্রেম অতঃপর বিয়ে; ডা. আকাশ কি মিতু সম্পর্কে বিয়ের আগে কিছুই জানতেন না? হঠাৎ করে মিতু নষ্ট, পথভ্রষ্ট, ব্যভিচারী হয়ে গেলেন? আর একজন ডাক্তার নিজেই পথেঘাটে হেরোইনখোরদের মতো নিজের মৃত্যুর জন্য ঝটপট ইনজেকশন নিলেন? মৃত্যু এত সহজ! একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে কি নিজের মৃত্যুর জন্য এভাবে ইনজেকশন নেয়া সম্ভব? অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ডা. আকাশ ও ডা. মিতু চরিত্র বর্তমান সমাজের সর্বত্রই বিরাজমান। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের গ্রামগঞ্জে যেভাবে ড্রাগ ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে তরুণ সমাজ বিপথগামী। রাষ্ট্র এবং সমাজ বিপথগামী তরুণ সমাজকে সুপথে আনার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। আবার বিয়ের পর ব্যভিচারী জীবনযাপন অব্যাহত রাখা সমাজের পরতে পরতে বিদ্যমান। 


ব্যভিচারী জীবন হবেই না কেন? দেশে পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক শিক্ষার বালাই নেই। আদব, সামাজিক মূল্যবোধ, সততা, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, উদারতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃজনশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ ও পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলী শিক্ষা পাঠ্যপুস্তক থেকে উঠে গেছে। আধুনিকতার নামে চলছে উলঙ্গপনার নৃত্য। পাঠ্যপুস্তকে শালীনতা, সৌজন্যবোধ, মেয়েদের পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে কিছু লিখলেই নারী নেত্রী ও সুশীলরা হৈ হৈ করে ওঠেন। ছাত্রীদের কাপড় পড়ার শালীনতা শেখালে নাকি মেয়ে শিক্ষার্থীদের অপমান করা হয়; তারা মনে কষ্ট পায়। সে সমাজে মিতুর মতো মেয়েই জন্ম নেবে, সেটাই অস্বাভাবিক! রাজধানী ঢাকার সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাকালে হাজারে মিতুকে পাওয়া যাবে। আর ডা. আকাশের মতো ছেলে সমাজের সর্বত্রই বিরাজমান।

পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাঙ্গনসহ সর্বক্ষেত্রে অবক্ষয়ের ছাপ। নৈতিক মূল্যবোধগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়ের খবর এখন নিত্য প্রকাশ পাচ্ছে। স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন, স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন, প্রেমিকার হাতে প্রেমিক খুন, প্রেমিকের হাতে প্রেমিকা খুন, ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, ছেলের হাতে মা খুন, দুলাভাইয়ের হাতে শালী খুন, পুত্রের হাতে পিতা খুন এবং খুন, ধর্ষণ, গুমের খবর এখন স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে শিশু ধর্ষণের খবর এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়ে গেছে। মানুষের জীবন যেন আরশোলা, মশা-মাছির জীবনের চেয়ে সস্তা হয়ে গেছে। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিদিন দেশের সড়ক দুর্ঘটনার খবর প্রচার হয়। গতকাল ২ ফেব্রুয়ারির খবর হলো গত ৭০৭ দিনে ৬ হাজার ৭৮ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। গড়ে প্রতিদিন প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা কত? অনেক দেশে যুদ্ধেও এক দিকে এত মানুষ প্রাণ হারায় না। 


যে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক শিক্ষার নামে নৈতিকতা অনুপস্থিত; সেখানে সামাজিক অবক্ষয় ঘটবেই। রাজনৈতিক অঙ্গন নিপীড়ন, পদ-পদবির লোভে মানুষ নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে মানুষ ধাবিত হচ্ছে অবক্ষয়ের দিকে। যৌতুক প্রথার মহামারীসহ নানাবিধ কারণে বিয়ে দিন দিন কঠিন হয়ে যাওয়ায় বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক, বিবাহপূর্ব সম্পর্ক, বিবাহের পরে পরকীয়া, যথাসময়ে বিবাহ সম্পন্ন না হওয়া ইত্যাদি কারণে নারী-পুরুষ নানাবিধ অনাচারে জড়িয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা সংস্কৃতি চর্চার নামে কি দেখছি? নাটক-সিনেমায় এখন তো গানে ‘তুমি-আমি’ ছাড়া আর কিছু নেই; বাবা-মা-ভাইবোন মরুক। দেশের ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘শুধু আমি-তুমি’ উসকে দিচ্ছে। ভাবখানা এমন- বন্ধু পাশে থাকলেই হলো আর কারও প্রয়োজন নেই। বন্ধুত্ব মানেই প্রেম। প্রেম মানেই জীবন, আর প্রেম মানেই বেহায়াপনা। এই যখন বাস্তবতা তখন ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যা এবং ব্যভিচারী স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর গ্রেফতার এবং তার বিচার সবকিছু আইন-আদালতের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। পুলিশি তদন্তের পর আদালতই নির্ধারণ করবেন প্রকৃত অপরাধী। কিন্তু বিচারের আগে গণমাধ্যমে একজন নারীকে অপরাধী শনাক্ত করে প্রচার-প্রচারণা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? এই রগরগা খবর প্রচার ছাড়া গণমাধ্যমের আর কোনো দায়দায়িত্ব নেই? 


১৬ কোটি মানুষের দেশে হাজারো সমস্যা-সংকট বিদ্যমান। সে সংকটগুলো কি মিডিয়ায় যথাযথভাবে তুলে ধরা হচ্ছে? নিত্যযানজট, রাস্তাঘাটের দুরবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতি, মাদকের থাবা, উজানে ভারত পানি সরিয়ে নেয়ায় হাজার হাজার নদী মাঘ মাসেই শুকিয়ে গেছে, সীমান্তে প্রায় নিত্যদিন হত্যাকান্ড ঘটছে, সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের অনুপস্থিতি- হাজারো সমস্যায় জর্জরিত দেশ, যা মিডিয়ায় তেমন যেখা যাচ্ছে না। কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, মধ্যস্বত্বভোগীরা সবকিছু লুটে নিচ্ছে, শীতের দিনেও ধুলোবালুতে পরিবেশ বিপর্যয় অবস্থা; এগুলো নিয়ে মিডিয়ার মাথাব্যথা নেই। ঢাকায় লাখ লাখ শিশু; অথচ ঘোষণা ছাড়াই রাজধানীর শিশু পার্কগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বস্তি এবং পথশিশুরা সাপ্তাহে এক দিন বিনে পয়সায় শিশু পার্কে যেত, সেটাও বন্ধ। হাজারো সমস্যা এবং নিত্যদিন নানা অঘটনের দেশে গণমাধ্যম যেন একজন নারীকে ম্লান করতে ঢাকঢোল পেটাচ্ছে।


আপনার এ্যাড দিন

ফটো গ্যালালি

Islamic Vedio

বিজ্ঞাপন ভিডিও এ্যাড




© All rights reserved © 2018 angina24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com