বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন
শামস শামীম ::
রাজনীতিতে সংঘাত ও হানাহানিমুক্ত বছর ছিল ২০১৮। বছরটি অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জেলার সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংঘাতমুক্ত শেষ হওয়ায় বছরটি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে বলে মনে করেন তারা। আগামী নতুন বছরও এমন অতিবাহিত হোক এটা চান তারা।
রোববার এক অজানা আতঙ্ক নিয়ে ভোট কেন্দ্রে গেলেও গুরুত্বপূর্ণ দিনটি শান্তি ও সম্প্রীতির জেলা খ্যাত সুনামগঞ্জে বড় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা। গত বছর কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগসহ নানা খাতের উন্নয়নের সঙ্গে রাজনৈতিক এই স্বস্তি নিয়েই নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চান জেলাবাসী। হাওরবাসীও চান কৃষিতে গেল বছরের ধারাবাহিক সফলতা।
২০১৮ সাল হাওরের কৃষিতে সুনামগঞ্জবাসীর জন্য আলোচিত একটি বছর। ওই বছরে স্বাধীনতার পরে প্রথম বারের মতো সম্পূর্ণ ফসল গোলায় তোলতে পেরেছেন হাওরের প্রায় তিন লাখ কৃষক পরিবার। ধান রোপণের আগে প্রায় দেড় লাখ চাষী পরিবারকে মওসুমের শুরুতেই বিনামূল্যে সার ও বীজসহ নগদ ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
গত বছর প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ধান উৎপাদন হয়েছে হাওরে। রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মিত হয়েছিল সম্পূর্ণ জনগণ ও কৃষকের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে। প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে নদী খনন করে নাব্যতা ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পটি চলমান আছে। কৃষি-অর্থনীতির এই শান্তিসুখ তাই ছড়িয়ে পড়েছিল আপামর মানুষের মনে। সেই সঙ্গে রাজনীতিতে সংঘাত না থাকায় এই স্বস্তিও ছিল নিয়ামকের মতো।
জেলার সচেতন মানুষদের মতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতেও মাইল ফলক উন্নয়ন হয়েছে হাওর জেলায়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ সেতু তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে হিন্দু-মুসলিম দুই ধর্মের দুই সাধকের নামে। ‘শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী’ নামের এই সেতুটি উদ্বোধনের ফলে পুরো সীমান্ত সরাসরি যোগাযোগের আওতায় আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য প্রায় শত কোটি টাকায় কাজ শুরু হয়েছে বছরের শেষ সময়ে।
একনেকে অনুমোদন লাভ করেছে ছাতকে সুরমা নদীর উপর বন্ধ থাকা সুরমা সেতুর কাজ। ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইন প্রকল্পটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্পে রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক স্কুল সরকারিকরণসহ একটি করে কলেজও সরকারিকরণ হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে খুশির খবর ছিল বছরের শেষ দিকে একনেকে ‘বঙ্গবন্ধু সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ২৫০ শয্যা হাসপাতাল’ অনুমোদন।
এছাড়াও একই বছরে নার্সিং কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং টেক্সটাইল কলেজও অনুমোদন হয়েছে। টেক্সটাইল কলেজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও হয়েছে। জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। অন্য উপজেলাগুলোতেও ৮০-৯০ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক নতুন বছরে এমনটা সবার প্রত্যাশা।
তবে উন্নয়নের সঙ্গে স্বস্তি ও নিরাপত্তার কারণে খুশি ছিলেন জেলাবাসী। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন রাজনীতিতে ভিন্ন মত-পথ থাকলেও তেমন উত্তাপ ছিলনা। সব রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের কর্মসূচি পালন করেছে। বড় হানাহানি, মারামারি বা সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। আইন শৃঙ্খলাও ছিল নিয়ন্ত্রণে।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, হাওরের কৃষিতে গত বছর আমাদের বড় সাফল্য ছিল। আগামী নতুন বছরে সেই ধারাবাহিকতার প্রত্যাশা করি। তবে আমাদের রাজনীতিবিদরা আমাদের একটি বছর সম্প্রীতি উপহার দেওয়ায় আমরা স্বস্তিতে ছিলাম। তাদের কাছ থেকে এটাই কামনা করি আমরা।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত বিজয়ী প্রার্থী, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমরা সুনামের সঙ্গেই বছর শেষ করেছি। আমাদের সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ সব খাতেই হাওরে অকৃপণ হাতে সহায়তা দিয়েছেন। হাওরের প্রতি অত্যন্ত দরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই আমাকে হাওরের জন্য স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। আমাদের নেত্রী মনে করেন জাতীয় গড় উন্নয়নে এখনো আমাদের হাওর পিছিয়ে।
তাই তার কাছে সবসময়ই হাওর অগ্রাধিকার পায়। যখনই তার কাছে হাওরে কোন প্রকল্প নিয়ে গিয়েছি তিনি সবগুলোরই অনুমোদন দিয়েছেন। আগামী বছরও এই ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। নেত্রী সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। নতুন বছরে তিনি সকলের সুখ, শান্তি ও জাতীয় সমৃদ্ধি কামনা করেন।