শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন
ইসলামী বিধান অনুসারে বিয়ে একটি অত্যন্ত গুরুপূর্ণ সওয়াবের কাজ । বিয়ে উপলক্ষে মেয়ে পক্ষ এবং ছেলে পক্ষ উভয়ই অনুষ্ঠান ও খাবারের আয়োজন করে থাকে । ইসলামে মেয়ে পক্ষের তুলনায় ছেলে পক্ষকেই অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্যে বেশি তাগীদ দেওয়া হয়েছে । আমাদের দেশে বৌভাত বা ওয়ালীমা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । ওয়ালীমা করা ওয়াজিব, যদিও বা একটা ছাগল যবেহ করা হয়, (আল হাদীস)।
ওয়ালীমার জন্য খাদ্য হিসেবে মাংস হওয়া জরুরি নয়। যে কোন হালাল খাদ্য দ্বারা এই মিলনোৎসব পালন করা যায় । তা শুধুমাত্র একটি খেঁজুর ও হতে পারে। গরীব মানুষদেরকে ওয়ালীমা ভোজে অর্থ বা খাদ্যাদি দিয়ে অংশ গ্রহণ করানো ধনী মানুষদের জন্য মুস্তাহাব । এই ভোজে বেছে বেছে ধণীদেরকে নিমন্ত্রণ করা এবং গরীব মানুষদের কে বাদ দেওয়া হলে এই খাদ্য নিকৃষ্টতম খাদ্যে পরিণত হয় । কোন কোন পরিবার কার্ড ছাপিয়ে, বিশাল অংকের টাকা খরচ করে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে কিন্তু তা থেকে বাদ পড়ে গরীব আত্নীয় স্বজন আর প্রতিবেশিরা।
দাওয়াত খাওয়িয়ে উপহার হিসেবে কত টাকা পেল আর কত টাকা খরচ হলো তা যোগ বিয়োগ করে লাভ ক্ষতি খুঁজে । এমন লোক দেখানো অনুষ্ঠান আল্লাহর কাছে কখনোই গ্রহনযোগ্য নয় । তাই এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করলে কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করেই করতে হবে। ওয়ালীমা অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রিত হলে তাতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব ।
যে ব্যক্তি বিনা কারণে এমন ভোজে উপস্থিত হয়না সে আল্লাহ্ এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর অবাধ্য । অন্যদিকে বিয়ের দাওয়াত কবুল করলে সাথে উপহার সামগ্রী নিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে যেতে না পারলে অনষ্ঠানে শরীক না হওয়া নতুন এক বিড়ম্বনা। বিশেষ করে মহিলারা এ ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। উপহার বা টাকা জোগাড় না হলে অনুষ্ঠানে আসতেই চায় না। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত লোকেরা নিজেদের আত্মীয় স্বজনের বিয়েতে এসব কারণে শরীক হতে পারেনা। অথবা হাজির হলেও মনে কষ্ট নিয়ে হাজির হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবার জন্য উপহার দিতেই হবে বা দেওয়া উচিত এমন কোন শর্ত বা প্রমাণ পাওয়া যায় না।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর আরব দেশেও এ ধরণের অনুষ্ঠানে এমন কিছু দেখা যায়না। কেউ কিছু হাদিয়া দিতে চাইলে গোপনে দিতেন। আমাদের মতো টেবিল সাজিয়ে বসে থাকতেন নাহ। বিয়ের দাওয়াতে কোন উপহার, গিফ্ট দিতেই হবে এ সম্পর্কে কোনো হাদীসে উল্লেখ পাওয়া যায় নি।
এই পদ্ধতিটা আমাদের সমাজের তৈরী এক ধরণের প্রতিবন্ধকতা। ইসলাম এসব প্রতিবন্ধকতায় বিশ্বাস করেনা। এসব কৃত্রিমতা থেকে আমাদের সমাজকে মুক্ত করতে হবে। আমাদেরকে আল্লাহ্ এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা:) এর হুকুম অনুসারেই চলতে হবে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা আছে “আল্লাহ্ তা আলা কারও উপর সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না”।
তাই আসুন আমরা বর্তমান আধুনিক সমাজের কৃত্রিমতার সাথে তাল না মিলিয়ে কোরআন ও সুন্নাহ অনুসারে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করি এবং দাওয়াতে অংশগ্রহণ করি। বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন যেনো লোক দেখানো না হয়ে আল্লাহ্ এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা:) কে খুশি করানোর উদ্দেশ্যে হয়।
“হে আল্লাহ্, আপনি আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন, আমিন।”