বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা বিশ্ব নবীর আগমনে, সুরভিত পরিবেশে পুলকিত বিশ্ব আজীবন সম্মাননা পেলেন জনাব ওসমান গণি ও শফিকুর রহমান মধু মিয়া বৃষ্টির ধারায় মুছে যাক “রোজা রাখি, আল্লাহর হুকুম পালন করি, নিজে সুস্থ থাকি অপরকে সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করি” মঙ্গলকাটা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ‘MCTC’র এক যুগ পূর্তিতে আনন্দ ভ্রমণ ফেনিবিল ও কোনাপাড়া সমাজকল্যাণ যুব সংঘের অমর একুশে উদযাপন ‘আব্দুল গণি ফাউন্ডেশন’ মেধাবৃত্তি পরিক্ষা-২২ এর বৃত্তি প্রাপ্তদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের ডলুরা বর্ডারহাটে অনিয়ম ও মাদক বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

মীনার নদী ভ্রমণ

মো: শফিকুল ইসলাম ::

আজ সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে।

নদীতে মনে হয় খুব ঢেউ থাকবে। তার উপর নৌকা থাকা না থাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে।

মিনার সকাল থেকেই বায়না ধরেছে ওর বাবার বাড়ি যাবে। ওর বায়না সাধারণত খুব শক্তই হয়। কোন কিছুর উপর একবার জেদ চেপে বসলে তা আদায় করেই ছাড়বে। তবে ওর ঘুরাঘুরির এই ব্যাপারটা আমার খুব খারাপ লাগে না।
আজ না গেলে হয় না, মীনা?
তুমি কি জানো, বৃষ্টির সময় নদী কত সুন্দর লাগে? নদী এখন পূর্ণযৌবনা। দুই ধারে পানি এখন উপচে পড়ছে। মাঝির বৈঠাটান আর বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দ তুমি কখনো একসাথে শুনেছো?
মীনার নদী ও বৃষ্টি নিয়ে কাব্যসুলভ ব্যাখ্যা শুনে আমি সত্যিই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। মীনার কথা শুনে মনে হল জীবনে কোনদিনই আমি নদী দেখিনি। আজ বের হতেই হবে।
বৃষ্টি ক্রমেই বেড়ে চলছে। আমি আর মীনা ছাতা মাথায় হাঁটছি। মনে হচ্ছে ছাতায় আর কাজ হবে না। একটা টং দোকানে আশ্রয় নিলাম। ৯/১০ বছরের একটা ছেলে বলল-
মামা, চা খাবেন?

কিরে তোর নাম কি?

জোনায়েদ। লোকেরা জনু বলে ডাকে। মামা, চা খাবেন?
এই দোকান কে চালায় জোনায়েদ?
আব্বায় চালায়। আমি মাঝে মাঝে বসি। চা খাবেন মামা?
তোর বাবা কোথায় জোনায়েদ?
আব্বায় গরু নিয়ে মাঠে গেছে। চা খাবেন মামা?
দে মামা।
মামি, আপনাকে দেব?
দাও ভাগ্নে।
মীনা মুচকি হাসছে। জোনায়েদ মনে হয় একটু লজ্জা পেল।
জোনায়েদ, তোমার নামটাতো খুব সুন্দর। তবে মানুষ কেন জনু বলে ডাকে। এটাতো ঠিক না।
মামা, আমরা গরীব মানুষ। আমাদের আবার নাম! মানুষ আমাদের এভাবেই ডাকে। লতিফরে লতু, করিমরে করু, হানিফরে হানু, সালাউদ্দিনরে সালু, আলাউদ্দিনরে আলু। এই এরকম আরো কত্ত কী! আগেই খারাপ লাগতো, এখন আর লাগে না।

চা বানানো ভালোই হয়েছে। ছোট্ট একটা ছেলে এখনই কত কাজ করে।
বৃষ্টি থেমে গেছে। আমরা নদীর ঘাটে এসে পৌছালাম। কিন্তু ঘাটে কোন নৌকা নাই। ১৫/২০ মিনিট পরে একটা নৌকা আসল।
ভাই, সফিপুর যাবেন?
যাব, ২০০ টাকা লাগবে দাদা।
আমরা নৌকায় উঠলাম। নদীর বুক চিরে নৌকা চলছে। ছোট ছোট ঢেউ এসে নৌকায় গায়ে লাগছে। ভালই লাগছে। কয়ারিয়া থেকে সফিপুর যেতে রামচর, বোয়ালিয়া, নাজিরপুর পার হয়ে যেতে হবে। একেবারে কম সময় লাগবে না। মীনার কথাই সত্যি হলো। সত্যিই নদী এখন পূর্ণযৌবনা। তিল ধারনের কোনটাই ঠাই নাই। এই আড়িয়ালখাঁকে এখন মনে হয় সাগরের মত। নদীর এপাশ থেকে ওপাশে সবকিছু ধোঁয়াশার মত দেখা যায়।
মীনা মোবাইলে ভিডিও করছে। ও নদীকে খুব উপভোগ করে। একটু অবসর পেলেই নদীর কাছে ছুটে আসতে চায়। নদী আমাকেও খুব টানে। নদীর কাছে আসলে মনে হয়, হৃদয়টা নদীর মতোই প্রশস্ত হয়ে যায়।

হঠাৎ আবার বৃষ্টি শুরু হল।
নদীতে ঢেউও বাড়তে লাগলো। নৌকা ঢেউয়ের উপর দিয়েই হেলে দুলে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার একটু ভয় লাগা শুরু হলো। মীনা মাঝিকে নৌকা কিনারায় ভিড়াতে বলল। মাঝি বলল-
কিচ্ছু হবে না, আপা। আল্লার নাম নেন।
আমি মনে মনে দোয়া পরতে লাগলাম। “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনু মিনাজ জোয়ালিমিন।” আমাকে মীনা চেপে ধরে আছে। একটু পরপর বড় বড় ঢেউ আসছে। হঠাৎ মনে হলো মাঝিরও ভয় পাচ্ছে। সে নৌকা কানারায় ভিড়াতে চেষ্টা করছে। হঠাৎ বড় একটা ঢেউ এসে নৌকার উপর আছড়ে পড়ল। নৌকা প্রায় ডুবে যাচ্ছিল। আমি চিৎকার দিয়ে আবারও দোয়া পড়তে লাগলাম।
নৌকা কিনারায় ভিড়ল। মনে হল দেহ থেকে উড়ে যাওয়া প্রাণ আবার দেহতে ফিরে এল। মেঘে ঢাকা সূর্য যেন মেঘ ভেদ করে আলো ছড়াল।
বৃষ্টি থামলে আমরা ফিরে আসলাম। দুজনেই পাশাপাশি হাঁটছি। ঐ টং দোকানের কাছে আসতেই জোনায়েদের কথা মনে হয়ে গেল। দোকানে ঢুকতেই জোনায়েদ বলল-
চা খাবেন মামা?
মীনা ফিক করে হেসে উঠল।
চা খাবেন মামী?

লেখক: মো: শফিকুল ইসলাম, গল্পাকার, ছড়াকার ও শিক্ষানুরাগী।


আপনার এ্যাড দিন

ফটো গ্যালালি

Islamic Vedio

বিজ্ঞাপন ভিডিও এ্যাড




© All rights reserved © 2018 angina24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com