বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন
খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী::
কাসামাহর বিখ্যাত ঘটনাটি বোখারী ও মুসলিমের বরাতে মেশকাতের প্রথম অধ্যায়ে এবং আবু দাউদের বরাতে তৃতীয় অধ্যায়ে উদ্ধৃত করা হয়েছে। প্রথম বর্ণনাটি হজরত রাফে ইবনে খোদাইজ (রা.) ও সহল ইবনে আবি খাসমা (রা.)-এর- তারা বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সহল (রা.) এবং মোহাইয়্যাসা ইবনে মাসউদ (রা.) খাইবার আগমন করেন এবং দু’জনই খেজুর বাগানে একে অপর হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। আবদুল্লাহ ইবনে সহল (রা.)-কে কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তি হত্যা করে। সহল (রা.)-এর পুত্র আবদুর রহমান এবং ইবনে মাসউদ (রা.)-এর পুত্র হোওয়াইসা ও মোহাইয়েসা হুজুর (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে এ সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত করেন। বয়সে সবচেয়ে ছোট আবদুর রহমানই কথা শুরু করেন। হুজুর (সা.) তাঁকে বললেন: ‘প্রথমে বড়কে বলতে দাও, বড়দের সম্মান প্রদান কর।’ এই হাদীসের একজন রাবীর নাম ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ বলেন, হুজুর (সা.)-এর কথা ছিল এই যে, ‘তোমাদের মধ্যে বয়স্ক কেউ কথা বলুক।’ সুতরাং, সে কথা বলল।
হুজুর (সা.) জবাবে বললেন: ‘তোমরা নিজেদের নিহত, অথবা সঙ্গীর শোণিতপণের তখনই অধিকারী হবে, যখন তোমাদের মধ্যে পঞ্চাশ ব্যক্তি হলফ করবে।’ তারা আরজ করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না।’ তিনি বললেন: ‘তাহলে পঞ্চাশ জন ইহুদী কসম করে তোমাদেরকে মুক্ত করে দেবে।’ তারা আরজ করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! তারাতো কাফের কসম করে বসবে।’ অত:পর রসূলুল্লাহ (সা.) নিজের পক্ষ হতে তাদেরকে শোণিতপণ প্রদান করেন।
অপর এক বর্ণনায় হজরত রাফে ইবনে খোদাইজ (রা.) বলেন: আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি খাইবারে নিহত হয়। তার ওয়ারিশগণ রসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয় এবং ঘটনা বর্ণনা করে। হুজুর (সা.) বললেন: ‘তোমাদের মধ্যে দুইজন সাক্ষী পেশ করো যারা তোমাদের নিহত ব্যক্তির হত্যাকারীর ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে।’ তারা আরজ করল: ‘হে আল্লাহর রসূল! যেখানে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে, সেখানে কোনো মুসলমান উপস্থিত ছিলেন না।’ ইহুদীদের ব্যাপারে কথা হলো, তারা এর চেয়ে অধিক সাহসের পরিচয় দিতে পারে। তিনি বললেন: ‘আচ্ছা, তোমরা ইহুদীদের মধ্যে হতে পঞ্চাশ ব্যক্তিকে মনোনীত করো এবং তাদের থেকে হলফ গ্রহণ করো।’ তখন তারা এতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে রসূলুল্লাহ (সা.) নিজের পক্ষ হতে নিহত ব্যক্তির শোণিতপণ প্রদান করেন। (আবু দাউদ)
বর্ণিত দুইটি হাদীস হতে জানা যায়, নিহত ব্যক্তির হত্যাকারী অজ্ঞাত ছিল এবং হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করার কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায়নি। তাই শোণিতপণ হিসেবে খোদ রসূলুল্লাহ (সা.) একশটি উট নিজের পক্ষ হতে নিহত ব্যক্তির ওয়ারেশগণকে প্রদান করেন। এর অর্থ হচ্ছে কোনো লোকের হত্যাকারী অজ্ঞাত থাকলে নিহতের ওয়ারেশগণকে রাষ্ট্রের পক্ষ হতে শোণিতপণ প্রদান করতে হবে।