রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩২ অপরাহ্ন
জান-মাল-আবরু, মানব জীবনে এ তিনটি মহামূল্যবান সম্পদ। জান না থাকলে মাল-সম্পদ, ধন-দওলাত এবং মান-সম্মান, ইজ্জত-আবরু কোনো কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না। তাই ইসলামে জানের নিরাপত্তা বিধানের সাথে সাথে বাকি দু’টির নিরাপত্তা-হেফাজতের ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে খুন বা হত্যা করা, জখম করা, গুম করা, অপহরণ করা অথবা নিজের প্রাণ নিজে বিনাশ করা তথা আত্মহত্যা করাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।
কারো ক্ষতি, অনিষ্ট বা হয়রানি করার জন্য দাগাবাজি, প্রতারণা, গাদ্দারি, চুরি, ডাকাতি, লুটতরাজ, আত্মসাৎ ইত্যাদি পাপাচার মাল-সম্পদের সাথে জড়িত। গালি-গালাজ, চুগুলখুরি, মিথ্যাচার, অপবাদ, দুর্ব্যবহার ইত্যাদিসহ আরো বহু অপকর্ম মানুষের ইজ্জত-আবরুর সাথে জড়িত।
ইসলাম এ সবকিছুর হেফাজত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বহু বিধি-বিধান জারি করেছে। এগুলোর মধ্যে সর্ব প্রথম প্রাণ রক্ষা করার কথা এসে যায়। প্রাণ হরণ করাকেই বলা হয় ‘কতল’, অর্থাৎ হত্যা করা। আর নিজেকে নিজে খুন করাকে বলা হয় আত্মহত্যা।
আল্লাহতাআলা রসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রাচীন জাতিগুলোর অনেক কাহিনী ও ঘটনা জানিয়ে দিয়েছেন, যা পবিত্র কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একটি ঘটনা বোখারী ও মুসলিমে এইভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘বনি মাখজুম’ গোত্রের এক নারী সম্পর্কে কোরেশরা খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছিল। এ নারীর অভ্যাস ছিল চুরি করা।
লোকেরা পরামর্শ করল যে, এ নারীর ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে কথা বলা দরকার। এ জন্য কে প্রস্তুত আছে? তাদের আলোচনায় কথা উঠে আসে যে, হজরত ওসামা ইবনে জাইদা (রা.) ব্যতীত আর কেউ নেই, যিনি এ সাহস করতে পারেন। তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ (সা.)-এর অতি প্রিয়। তিনি বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সা.)-কে জানান।
রসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: ‘হে ওসামা! তুমি কি আল্লাহর সীমার ব্যাপারে সুপারিশ করছ?’ এতে ওসামা বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করুন।’ এরপর রসূলুল্লাহ (সা.) একটি খুৎবা দেন এবং আল্লাহর প্রশংসা-গুণ বর্ণনার পর বলেন: ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এ কারণেই ধ্বংস হয়েছে, যখন তাদের মধ্যে কোনো বড় লোক চুরি করত তাকে ছেড়ে দেয়া হতো এবং যখন কোনো দুর্বল লোক চুরি করত, তার ওপর দÐবিধি কার্যকর করা হতো। কসম সেই সত্তার, যার কব্জায় রয়েছে আমার প্রাণ! যদি ফাতেমা (রা.) বিনতে মোহাম্মদ (সা.) ও চুরি করত, আমি তার হাত কেটে দিতাম (আল ইয়াজু বিলাল্লাহ)।’
অতঃপর রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশে সেই মাখজুমী নারীর হাত কর্তন করা হয়। মুসলিমের একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত উম্মে সালমা (রা.) ঐ নারী সম্পর্কে কথা বলতে গেলে রসূলুল্লাহ (সা.) উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
অপর একটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি (ছেলে ধরা) শিশুদের অপরণ করে নিয়ে যেত। তাকে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত করা হয়। তিনি তার হাত কর্তন করে দেন। অপর এক খাদ্যচোরকে তাঁর নিকট আনা হলে তিনি তার হাত কর্তন করলেন না। অর্থাৎ ছেলে ধরার শাস্তি, হাত কর্তন এবং খাদ্য চোরের শাস্তি তা নয়।