বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন
“ছন্দে-গল্পে আমার নবী (স:)” এর দ্বিতীয় পর্ব
মহামানবের আবির্ভাব মো:শফিকুল ইসলাম::
নবী কুলের শিরোমনি আমার নবী হযরত,
জন্ম নিলেন আরব দেশে হয়ে ধরার রহমত।
আবরাহা হস্তী নিয়ে আসলো কাবায় যে বছর,
কুরাইশ বংশে এলেন রাসুল হলেন চির অমর।
পিতা তাহার আব্দুল্লাহ, মুত্তালিব এর সন্তান,
মাতৃগর্ভে যখন রাসূল, হলেন পিতা তিরোধান।
মা-আমিনা, নানা-ওয়াহাব বনু জোহরার ধারক,
গর্ভকালেই স্বপ্ন দেখেন গর্ভে মহনায়ক।
দাদা রাখেন “মোহাম্মদ” অর্থ যার প্রশংসনীয়,
অপর নামটি আহমদ, আহ কী মধুর অমীয়।
এতিম হয়ে জন্ম নিলেন আমার নবী মুহাম্মদ (স:),
ধন্য জাতি, ধন্য আমি, ধন্য সকল উম্মত।
কেটে গেল অমানিশ, বদলে গেল এই নিখিল,
মহামানবের আবির্ভাবে শীতল হলো যুগ জাহিল।
জন্ম পর্ব (মহামানবের আবির্ভাব)
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সুযোগ্য পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) এর অধস্তান বংশধরদের থেকে আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সুপ্রসিদ্ধ কুরাইশ বংশের গোড়াপত্তন হয়। এ বংশের রয়েছে সুবিশাল ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আব্দুল মোত্তালিব হিজাজ এর নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত থাকাকালে আবিসিনিয়ার রাজা আবরাহা কাবাঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বিশাল হস্তী বাহিনী নিয়ে মক্কা শরীফে আসে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আবাবিল নামক ক্ষুদ্র পাখির দল পাঠিয়ে তাদের সমূলে ধ্বংস করেন। আবরাহা হস্তিবাহিনী নিয়ে এসেছিল বলে এ বছরকে আমুল হিল বা হস্তির বছর বলা হয়।
একই বছরে আব্দুল মুত্তালিবের দ্বাদশ পুত্র আব্দুল্লাহর সাথে বনু জোহরার গোত্র প্রধান আব্দুল ওয়াহাব এর কন্যা আমিনার বিয়ে হয়। মাত্র ২৫ বছর বয়সে রাসূল (সঃ)এর পিতা আব্দুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। আব্দুল্লাহ মৃত্যুর পূর্বে পাঁচটি উট, স্বল্প সংখ্যক বকরি ও ভেড়া এবং উম্মে আয়মান নামক এক দাসী রেখে যান। এ সময় বিবি আমেনা সন্তানসম্ভবা ছিলেন।
রাসূল (সঃ) এর জন্ম তারিখ নির্ধারণে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহাসিক তাবারি ইবনে খালদুন, ইবনে হিশাম প্রমূখ ১২ রবিউল আউয়াল নির্দেশ করেছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক আবুল ফিদা বলেন, ১০ তারিখে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)এর জন্ম হয়েছিল। জন্মের সপ্তম দিনে আব্দুল মোত্তালিব আরবের চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে আকিকা উৎসব করে তার নাম রাখেন মোহাম্মদ। যার অর্থ পরম প্রশংসিত। আর বিবি আমিনা পুত্রের নাম রাখেন আহমদ। অর্থ পরম প্রশংসাকারী। কুরআন মাজিদে রাসূল (সঃ) এর দুটি নামের এই উল্লেখ আছে।
রাসূল (সঃ) এর আম্মাজান আমিনা বিনতে ওয়াহাব বলেন, আমার পুত্র মোহাম্মদ (সঃ) কে গর্ভে ধারণ করার পর আমি নানা রকম স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করি। তিনি বলেন, একবার স্বপ্নে আমাকে কে যেন বলল, মানব জাতির মহানায়ককে তুমি গর্ভে ধারণ করেছ। তিনি যখন ভুমিষ্ট হবেন, তুমি বলবে, আমি আমার এই সন্তানকেই হিংসুকের অনিষ্ট থেকে এক আল্লাহর আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। তার নাম রেখো মোহাম্মদ।
তিনি গর্ভে থাকাকালে আমিনা আরো স্বপ্ন দেখেন যে, তার দেহ থেকে এমন একটা অলোকরশ্মি বের হলো, যা দিয়ে তিনি সুদূর সিরিয়া ভূখণ্ডের বুসরার প্রসাদ পর্যন্ত দেখতে পেলেন।
পরিশেষে রাসূল (সঃ) জন্মের মাধ্যমে আরব থেকে সকল অন্ধকার, অনাচার, ব্যভিচার, কুসংস্কার দূর হতে থাকলো। পৃথিবীর মানুষ নতুন করে যেন আরেক পৃথিবী পেল।
লেখক:: মো: শফিকুল ইসলাম, গল্পাকার, ছড়াকার, আলেম ও শিক্ষাবিদ।