বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন
মোসাইদ রাহাত ::
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, আয়ূব বখত জগলুল সুনামগঞ্জ শহরকে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন করার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমরা তাঁর অপূর্ণ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে কাজ করবো। অসাম্প্রদায়িক মানুষের নেতা জগলুল ছিলেন একজন মহৎপ্রাণ হৃদয়ের মানুষ। তিনি বলেন, এই শহর জগলুলের শহর। এ শহরকে সুন্দর করার জন্য তিনি একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক, পৌর কমিউনিটি সেন্টার, হর্কার্স মার্কেট, সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার নির্মাণসহ অনেক পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এই শহরকে নিয়েই জগলুলের আশা ও স্বপ্ন ছিল। তিনি সৎ ও ভালো চিন্তা করতেন। আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার মানুষের জন্য নেওয়া জগলুলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সমর্থন করে। প্রয়াত মেয়র জগলুলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা ঢাকায় গিয়ে আমাদের কর্তৃপক্ষদের অবহিত করবো এবং তার ভাই নাদের বখতকে অনুরোধ করব একটি সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি করে আমাদের স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো আয়ূব বখত জগলুলের সবগুলো স্বপ্ন বাস্তবায়নের।
শনিবার দুপুরে শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জ পৌরসভার জননন্দিত মেয়র আয়ূব বখত জগলুলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত নাগরিক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সুনামগঞ্জ পৌরসভা এই নাগরিক স্মরণসভার আয়োজন করে।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান সেলিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শামছুল আবেদীনের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নাগরিক স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সহ-সভাপতি অ্যাড. আফতাব উদ্দিন আহমেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের এমপি অ্যাড. শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে, সিনিয়র আইনজীবী আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন, জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমন, সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. চাঁন মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল, অ্যাড. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আরো বলেন, আমাদের সরকার কথায় বিশ্বাসী নয়, কাজে বিশ্বাস করে। শেখ হাসিনা আমাদের বলেন- কম কথা বলেন কাজ বেশি করেন। আমরা তাই করবো। নাদের বখত যদি তাড়াতাড়ি করে প্রস্তাবগুলো নিয়ে আসেন। আমি নিজে উপস্থিত থেকে নেত্রীর পাশে থেকে এগুলো যেনো পাস হয় এবং কাজ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিবো। এই এলাকা, শহরের জন্য আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। গত মঙ্গলবারের একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বলেছেন আপনারা ভাটি অঞ্চলের মানুষ, দরিদ্র, গরীব মানুষের জন্য আরো প্রকল্প নিয়ে আসুন। আমি এগুলো পাস করে দিবো। মানুষের কল্যাণের জন্য বিশেষ করে নারীদের উন্নয়নের জন্য, শিক্ষার জন্য, বয়স্ক মানুষের জন্য, স্বাস্থ্যের জন্য প্রকল্প নিতে হবে। আমাদের টাকার কোনো অভাব হবে না। আয়ূব বখত জগলুলের স্মৃতিতে তর্পণ করে আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই এ বীর পুরুষ আমাদের কল্যাণে কাজ করে গিয়েছেন আমি ওয়াদা করছি আমি এবং আমার সাথে যারা সাংসদ রয়েছেন আমরা সবাই একত্রিত হয়ে আমাদের প্রিয় সুনামগঞ্জকে সুন্দর করবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, আয়ূব বখত জগলুল শুধু শহরবাসীর নেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলার ২৬ লক্ষ মানুষের হৃদয়ের নেতা। তিনি ছিলেন প্রতিবাদী মানুষের নেতা। আমি দেখেছি তার মৃত্যুর সংবাদ শুনার পর মানুষের ঢল, মানুষের চোখের অশ্রু। সেইদিন জানাযার নামাজে উপস্থিত ছিলাম সুনামগঞ্জ স্টেডিয়ামে মানুষের জায়গা হয় নাই। স্মরণকালে এতো বৃহৎ জানাযার নামাজ এই সুনামগঞ্জে দেখি নাই। আজকে এই স্মরণসভা প্রমাণ করে জাতি বর্ণ নির্বিশেষে আয়ূব বখত জগলুল সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি। তিনি শুধু এই এলাকার প্রতিনিধি নন, তিনি প্রতিটি মানুষের একজন প্রতিনিধি হিসেবে এই জেলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই আজকে তাকে হারিয়ে আমরা দুর্বল হয়েছি। তিনি আমাদের নিয়ে যে পথে অগ্রসর হয়েছেন আমরা এ পথে অগ্রসর হই। তার যে স্বপ্ন ছিল, যে স্বপ্নে তিনি বিভোর ছিলেন আমরা তাঁর স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, তাঁর মৃত্যুর আগের দিন থেকে আমি রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তাঁর সাথে ছিলাম। এই সুনামগঞ্জের স্বপ্ন নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে হালুয়ারঘাট থেকে পিরোজপুর পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ ও রাস্তা করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানকে অনুরোধ করবো আপনি পদক্ষেপ নিবেন। আমরা সহযোগিতা করবো। এই সুনামগঞ্জকে দৃষ্টিনন্দন শহর হিসেবে, আধুনিক শহর হিসেবে সাজানোর স্বপ্ন ছিল আয়ূব বখত জগলুলের। তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. পীর ফজলুর মিসবাহ বলেছেন, জননেতা আয়ূব বখত জগলুল ছিলেন ¯্রােতের বিরুদ্ধে। লড়াই করার আদর্শিক রাজনীতিক এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আদর্শের জন্যে এবং নিজের কর্মীদের জন্যে লড়াই করতে করতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সারাজীবনের রাজনীতিতে মেয়র জগলুল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দ্রোহ করেছেন, প্রতিবাদ করেছেন কিন্তু অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। আয়ূব বখত জগলুলের মতো আদর্শিক রাজনীতিক সুনামগঞ্জের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। আমরা তাঁর শূন্যতা প্রতিনিয়ত অনুভব করছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ-মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য অ্যাড. শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী বলেন, জগলুল ছিলেন সাহসী নেতা। তার এতোই সাহস ছিল অনেকের দেয়াল ভেঙে রাস্তা প্রশস্ত করার কাজ করেছে এবং দৃষ্টিনন্দন সুনামগঞ্জ পৌরসভার গড়ার স্বপ্ন ছিল। আমরা সবাই তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট বলেন, আয়ূব বখত জগলুল একজন সাদা মনের মানুষ ছিলেন। উনি ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। জগলুলের সাথে আমার বিভিন্ন সময় মতবিরোধ ছিল। কিন্তু আমরা একমঞ্চে একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ করেছি। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ ছিল না। আমরা এক হয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি-জামায়াতের বিরোধিতা করেছি এবং তাদেরকে সুনামগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করেছি। জগলুল বিভিন্নভাবে সুনামগঞ্জ পৌরসভাকে সুন্দর করার চেষ্টা করেছিলেন। যে পরিমাণে সুন্দর রাস্তাঘাট করেছে সেটা মানুষের কাছে দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। জগলুল যদি মারা না যেতেন তাহলে আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী হতো। আজকে জগলুল মারা যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের ডান হাত ভেঙে গেছে। সেই ডান হাত পূরণের জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি যারা বর্তমানে নেতৃবৃন্দ আছেন তারা আসেন সেই দায়িত্বগ্রহণ করুন এবং আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করুন। বর্তমান আওয়ামী লীগের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আমরা বিভিন্ন সময় মিটিং মিছিল করেছি আমরা দেখেছি কতজন মানুষ এসেছে। কিন্তু জগলুল থাকা অবস্থায় সেই হল, মাঠ মানুষের ¯্রােতে ভরে যেতো।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখতের সভাপতিত্বে নাগরিক স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ, শিক্ষাবিদ দিলীপ কুমার মজুমদার, ধূর্জটি কুমার বসু, অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি সুবীর তালুকদার বাপ্টু, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ স¤পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক স¤পাদিকা নিগার সুলতানা কেয়া, মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য, পৌরসভার প্যানেল মেয়র হোসেন আহমেদ রাসেল, কাউন্সিলর গোলাম সাবেরীন সাবু, চঞ্চল কুমার লোহ, পৌর আ.লীগের সাধারণ স¤পাদক সাজিদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুয়েব চৌধুরী, সাধারণ স¤পাদক জুবের আহমেদ অপু, জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক সেলিম আহমেদ, সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম মুবিন, শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অবনি মোহন দাশ, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. মণীষ কান্তি দে মিন্টু, মোশারফ হোসেন, বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার বিজু, মোকসেদ মিয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক স¤পাদক আবুল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ স¤পাদক রফিক আহমেদ চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দিপঙ্কর কান্তি দে, সাধারণ স¤পাদক আশিকুর রহমান রিপন, বাহারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র সরকার, বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরবৃন্দ ও নেতাকর্মীরা।
সভাপতির বক্তব্যে পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, আমার সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হওয়ার কথা ছিল না। আমার ভাই ছিলেন আপনাদের প্রিয় নেতা। তাঁর উদ্যোগে সুনামগঞ্জ পৌরসভা আজ দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। কিন্তু তার হঠাৎ চলে যাওয়ায় আমাকে আসতে হয়েছে। আমার ভাইয়ের অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করতেই আজকে আমি আপনাদের পরামর্শে মেয়র হয়েছি।
স্মরণসভার শুরুতে প্রয়াত মেয়র আয়ূব বখত জগলুলের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া সাংবাদিক রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু ও শামস শামীম সম্পাদিত ‘আয়ূব বখত জগলুল স্মারকগ্রন্থে’র মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ।
এর আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা নুরুল হক নোমানী ও গীতাপাঠ করেন নির্মল চক্রবর্তী।