বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জে মাদক ব্যবসায়ীরা নানা কায়দায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীকে নিষিদ্ধ ব্যবসায় যুক্ত করে ফেলছে। রোববার সন্ধ্যায় প্রেমিকার হাত থেকে পুতুল নিয়ে ফেঁসে গেছে দুই কলেজ শিক্ষার্থী। পুলিশ কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের নবীনগর এলাকা থেকে ওই ২ কলেজ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের হাতে থাকা পুতুলের ভেতর ৯০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃত ওই দুই কলেজ শিক্ষার্থী হচ্ছে শাখাওয়াত হোসেন (১৯) ও শাহাজাহান মিয়া (২০)। এই দুইজনকেই সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের ছেলেরা ষড়যন্ত্রের শিকার। এরা মাদকাসক্ত কিংবা বিক্রেতা, কোনটাই নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাহিরপুরের লাউড়ের গড়ের বাসিন্দা মোতালিব মিয়ার ছেলে শাখাওয়াত হোসেন (১৯) এবং একই গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে শাজাহান মিয়া (২০) যথাক্রমে শহরের একটি কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। শহরতলির ধারারগাঁও পার্কে রোববার বিকালে এই দুই শিক্ষার্থী’র সঙ্গে সময় কাটায় সুরমার উত্তর পাড়ের নারায়ণতলা মিশনারী স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোমা আক্তার সুমি। সুমি’র সঙ্গে কয়েকদিন হয় শাখাওয়াতের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
সোমা আক্তার সুমি সীমান্তের ডলুরা গ্রামের মাদক স¤্রাজ্ঞী হিসাবে পরিচিত জ্যো¯œা বেগমের মেয়ে। জ্যো¯œার স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়েছে অনেক আগেই। স্বামী ঝক্কু মিয়া অন্য আরেক মহিলাকে বিয়ে করে ডলুরা ছেড়ে ঢাকায় চলে গেছেন। জ্যো¯œা এখন ডলুরায় তার ভাইয়ের বাড়িতে থাকেন। তার দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিলেও সংসার হয়নি তার। কলেজে পড়–য়া ওই মেয়েটিও এখন কৌশলে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ছেলে দুটিও এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত। এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, এই পরিবারের সকলেই মাদক ব্যবসায়ী।
পুলিশ জানিয়েছে, রোববার বিকালে সোমা আক্তার সুমি ধারারগাঁও সুরমা ভ্যালি পার্কে বসে শাখাওয়াত ও শাজাহানকে নিয়ে সময় কাটায়। এক পর্যায়ে সে একটি পুতুল শাখাওয়াতের হাতে তুলে দেয় তাহিরপুরের বিন্নাকুলির আলম সাব্বিরকে দেবার জন্য। পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পায় ওই পুতুলের ভেতর ইয়াবা রয়েছে। পরে ধারারগাঁও সুরমা ভ্যালি পার্ক থেকে ওই দুই শিক্ষার্থী ফেরার পথে নবীনগর এলাকায়ই এদের আটক করে পুলিশ।
রাতেই মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৪ জনকে আসামী করে মামলা (নম্বর-৩, তারিখ ০৩.০২.১৯) দায়ের করে পুলিশ। মামলার আসামীরা হচ্ছে শাখাওয়াত হোসেন, শাজাহান মিয়া, সোমা আক্তার সুমি ও আলম সাব্বির। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুনামগঞ্জ সদর থানার এসআই জালাল উদ্দিন বললেন,‘ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারকৃতদের সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত এদের জেলা হাজতে পাঠিয়েছেন। মাদক স¤্রাজ্ঞি জ্যো¯œা’র মেয়ে সোমাসহ অন্য আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এদিকে, পুতুলের ভেতর ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হওয়া শাখাওয়াতের বাবা মোতালিব মিয়া দাবি করেন তার ছেলে শাখাওয়াত এবং শাজাহান ষড়যন্ত্রের শিকার। এলাকার একটি মারামারি’র ঘটনার সূত্র ধরে গ্রাম্য প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্র করে তার ছেলে এবং তার সম্পর্কিত ভাগ্নেকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, তার ছেলে এবং শাজাহান কোন ভাবেই ইয়াবা আসক্ত নয়। বিক্রেতাও নয়। মাদক স¤্রাজ্ঞি জ্যো¯œার মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের সখ্যতা কীভাবে হলো, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘এই বিষয়টি আমিও ভেবে পাচ্ছি না।’
সোমবার বিকালে এ বিষয়ে খোঁজ নেবার জন্য সীমান্তের ডলুরা গ্রামে একজন গণমাধ্যম কর্মী জ্যো¯œার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কোন সদস্যকেই না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। গ্রামবাসী জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যা থেকেই জ্যো¯œা ও তার ছেলে মেয়ে কেউ বাড়িতে নেই।