বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন
আঙিনা ডেস্ক :
সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী ডলুরা এলাকায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সামধিস্থলের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন হয়েছে। এখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। সমাধিস্থলের মূল ফটকসহ ভিতরের শহীদ সমাধিগুলোর পাশে নতুনভাবে ফলক নির্মাণ করে তাতে শহীদদের নাম-ঠিকানাসহ পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। শুক্রবার সকালে এই উন্নয়নকাজের উদ্বোধন হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. শামীমা শাহরিয়ার, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, সুনামগঞ্জ মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল কবির রুমেন, মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ
॥ও আবু সুফিয়ান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়াসমিন নাহার রুমা।
অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিপিএম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে অনেকে শহীদ হন। আজ তাদের স্মৃতিকে আমরা লালন করছি। আগামী প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্মন্ধে জানতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া খুবই প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে আজীবন ধরে রাখতে এবং মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের জানার জন্য বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করতে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। ডলুরা শহীদ মিনার এলাকায় যাদুঘর নির্মাণ, ৩ তলা বিশিষ্ট ডাক বাংলো, মসজিদ ও মন্দির নির্মাণ করা হবে। দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারী দেওয়ালও নির্মাণ করা হবে।
সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ শামীমা শাহরিয়ার বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধারা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এই স্বাধীন দেশ আমরা পেতাম না। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেকে শহীদ হয়েছেন। আমরা তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। সকলে মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা দেশ স্বাধীনের পরও থেমে থাকেনি। এই জন্য সকলে সজাগ থাকতে হবে।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের (সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, এই ডলুরা শহীদ মিনারে আজ অনেক দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসেছেন তাঁদের স্বজনদের সমাধিস্থান দেখতে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা দেশস্বাধীনের যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধারা বিএনপি সরকারের সময় গোপন থাকতেন। নানা আতংকে তাদের পরিচয় দিতেন না। অনেক মুক্তিযোদ্ধারা লাঞ্চিত হয়েছেন। সরকার এই মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ডলুরা এলাকায় একটি শুল্ক স্টেশন করার জন্য ইতিমধ্যে জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। শুল্ক স্টেশন চালু হলে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান চালু হবে। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ধারারগাঁও-হালুয়ারঘাট সেতু নির্মাণের ইতিমধ্যে অনেক কাজ শেষ হয়েছে। আরও কিছু কাজ বাকী রয়েছে। এসব কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রীর সাথে বৃহস্পতিবার আলাপ হয়েছে। তিনিও আশ্বস্ত করেছেন আমাদের।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, ধরমপাশা ও জামালগঞ্জ) সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ধারারগাঁও-হালুয়ারঘাট এলাকায় সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণ হলে এই এলাকার মানুষের যোগাযোগ সহজ হবে। জেলার বাইরের মালামাল আনা-নেওয়া সহজ হবে। এলাকার হাজারো মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। এই সেতু নির্মাণের জন্য মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। আশাকরি দ্রুত কাজ সম্পন্ন করে সেতু বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করবেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় লোকজন অংশ নেন। অতিথিরা ডলুরা পৌঁছে প্রথমে শহীদ সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের যুদ্ধদিনে যাঁরা এই এলাকায় শহীদ হন তাঁদের মৃতদেহগুলো এক জায়গায় এনে রাখতেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মধু মিয়া। তিনি লেখাপড়া জানতেন না। তাঁর একটি ছোট্ট নোটবুক ছিল। এই নোটবুকেই ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের দিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাহিত করার আগে নাম-ঠিকানা লিখে রাখতেন। এভাবে তিনি ডলুরায় ৪২জন মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাকে সমাহিত এবং একই স্থানে ছয়জন হিন্দু মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ দাহ করেন। এই শহীদদের মধ্যে সুনামগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা রয়েছেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে এই গণকবরকে ঘিরে শহীদ স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়। শুরুতে স্মৃতিসৌধের চারদিকে ৫ফুট উঁচু সীমানা দেয়াল এবং ৪৮ শহীদের একটি নাম ফলক নির্মাণ করে দেন ৫নম্বর সেক্টরের সেলা সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এ এস হেলাল উদ্দিন। পরবর্তীতে তাঁর অর্থায়নেই এখানে দর্শনার্থীদের জন্য রেস্ট হাউস নির্মাণ হয়। ২০০৮ সালে জেলা পরিষদ এখানে ‘ছায়াকুঞ্জ’ নির্মাণ করে। ২০১১ সালে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য। সম্প্রতি প্রশাসন ও সুনামগঞ্জ মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের উদ্যোগে আবার স্মৃতিসৌধের উন্নয়ন কাজ হয়েছে।