বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ অপরাহ্ন
মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম ::
ফারসি শব্দ রোজার আরবি অর্থ হচ্ছে সওম, বহুবচনে সিয়াম। সওম বা সিয়ামের বাংলা অর্থ বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তে সওম হল আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশে নিয়তসহ সুবহে সাদিকের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য নিষেধ মূলক কাজ থেকে বিরত থাকার নাম-ই হলো রমাদান বা রোজা। সকল প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মুসলমানের জন্য এক মাসের রোজা রাখা বাধ্যতামূলক।
ইসলামে রোজা বা রমজান ফরজ হিসাবে বাধ্যতামূলক করা হয় হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে। এরপর থেকেই অপরিবর্তিত রূপে সারা পৃথিবীতে রোজা পালন করা হচ্ছে।
রমজানের মতো না হলেও ইহুদি এবং অন্যান্য আরও অনেক জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেও রোজার মতো সারাদিন পানাহার না করার ধর্মীয় রীতি দেখা যায়।
রমজানের রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ওপর ফরজ করে দেওয়া একটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বলেন :
(يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ )
{হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।} [সূরা আল বাকারা:১৮৩]
কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা’য়ালা অন্যত্র বলেছেন
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
‘’কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫)
মূলত এ আয়াতের মাধ্যমেই বান্দার ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.)থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য আরেকটি হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমযান মাসের রাতে এবাদত করে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
রমজান আল্লাহ ও বান্দার মাঝে নিতান্ত গোপন ইবাদত তাই এর মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পর্ক দৃঢ়তর হয়।
শুধু ধর্মীয় রীতি অনুসারেই নয় বরং রোজা রাখার বৈজ্ঞানিক অনেক সুফল আছে। রমজানের একমাস সিয়াম পালনের মাধ্যমে শরীরে অনেক শারীরবৃত্তীয়, জৈব রাসায়নিক, বিপাকীয় ও আধ্যাত্মিক পরিবর্তন ঘটে।
গবেষণায় দেখা গেছে, রমজানের প্রথম কয়েকদিনে রক্তে শর্করার মাত্রা ও রক্তচাপ উভয়ই কমে যায়। শরীর পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া শুরু হয় ও প্রথম কয়েক দিন সবচেয়ে কঠিন। কারণ এ সময় সাধারণত মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ও তীব্র ক্ষুধা লাগার সমস্যা দেখা দেয়।
রমজানের প্রথম সপ্তাহের পর শরীর উপবাসের সময়সূচির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করে ও পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম নিতে সক্ষম হয়। পাচনতন্ত্র শরীরের শ্বেত রক্তকণিকাগুলো আরও সক্রিয় করতে সাহায্য করে।
একই সঙ্গে শরীরকে আরও পরিষ্কার করে, নতুন কোষ গঠন করে এবং শক্তি জোগায়। এ পর্যায়ে অঙ্গগুলোও তাদের মেরামত প্রক্রিয়া শুরু করে।
সতারং রোজা রাখার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের চেষ্টার পাশাপাশি নিজেকেও সুস্থ রাখার চেষ্টা করি।
লেখক :: মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম :: কলামিস্ট, আইনজীবী ও জিও পলিটিক্স বিশ্লেষক।