বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ অপরাহ্ন
সেদিন ১৮ জানুয়ারী ২০১৮ ইং গভীর রাতে যখন কলম নিয়ে চিন্তা করছিলাম। তখন শিক্ষকদের সংগঠণগুলোর ডাকে আমরণ অনশন চলছে রাজধানীর পেসক্লাবে। আমরা শতাধীক সুনামগঞ্জের স্যারকে নীল পলিথিনের নিচে না খেয়ে প্রচন্ড শীতে কাপতে দেখে চোখ দুটো থেকে পানি ঝড়ঝড়িয়ে বেরুচ্ছিল। হায় মানবতা হায় শিক্ষকতা ! তুমি কাদালে , নিষ্ঠুর কর্তৃপক্ষ তোমার কী বিবেক বলতে কিছু নেই। রাতের অন্ধকারে ঘনকুয়াশায় থরথর করে যখন মানুষ কাপছে। ত্রান বিতরণ করছে শীতার্থ মানুষকে তখন টিভির পর্দায় বিশ্ব বিবেক দেখছে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের জন্য আমৃত অনশনের ডাক দিয়ে দিবানিশী অবস্থান করছে। শিতার্থ শিক্ষক আর কুকুর রাজপথে ঘুমাচ্ছে দেখে চমকে উঠে মানবতা। হে উন্নত শীর কোথায় তোমার ইজ্জত। তোমাকে সম্মান করার জন্য কেউ কী নেই। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রি আর শিক্ষামন্ত্রির উপর কী এর দায়ভার বর্তায় না ?
সেদিন অর্থ মন্ত্রী টিভির পর্দায় লেপ মুড়ি দিয়ে ফিল ফিল হাসছে দেখে বিশ্ববাসী এ আন্দোলনে চিত্র দেখছে। এ কেমন নিলর্জ্জ আচরন এক দেশে দুই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা দুই ধরনের আচরন। সমগ্র মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণে বেলায় অবহেলার শিকার তা বোধ গম্য নয়।
জাতীয়করণের ক্ষেত্রে এক শ্রেণির প্রধান শিক্ষকগণ প্রতিবন্ধক। উনারা চান না যে, বিদ্যালয় জাতীয়করণ হোক। যদি হয়ে যায় তবে তারা বিদ্যালয়ের অর্থ কোষাগারে জমা দিতে হবে। যতোইচ্ছা অর্থ অপব্যবহার করা যাবে না। শিক্ষকরা জাতীগঠনের কারিগর। তাঁরা এ পেশায় বাইরে অন্য কোনো ইনকাম করার বর্তমানে কোনো সুযোগ নেই। টিউশনী বা প্রাইভেট তো দন্ডনীয় অপরাধ। সুযোব বা ইচ্ছা থাকলেও ব্যবসা বা ড্রাইভিং কিংবা অন্য কোনো পেশাদায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন না।
এতএব জাতয়করণ হলে অর্থনৈতিক দায়ভার সন্তান, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা বা বৃদ্ধ মাতা-পিতার ব্যয় নির্বাহ করে সুন্দর জীবন যাপন করা সম্ভব।
বর্তমানে শিক্ষকগণ পান অনুদান আবার অনুদানের উপর Income Tex (রেভিনিউ) এ যেনো মরার উপর খারার গাঁ।
যে শিক্ষকদের Provident Found (বাধ্যতামুলক) নাই , House Rent ভাতা (যদিও ১০০০ টাকা নির্ধারিত), নাই Medical ভাতা (৫০০ টাকা নির্ধারিত), নাই উৎসব ভাতা (থাকলেও ২৫%)। পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস (২৫% বর্তমানে দেয়া হয়।)
অথচ জেলা সদরে ১০/১২ হাজারের ক্রমে বাড়ী ভাড়া পাওয়া কঠিন ব্যাপার । একজন শিক্ষক ১৬০০০/- টাকা বেতন পেলে বাড়ী ভাড়া দিতে হবে ১২ হাজার টাকা বাদ বাকী ৪ হাজার টাকায় ১ মাস কীভাবে কাটবে। সরকার কী এ ব্যাপারে চিন্তা করেছেন। তাই দেওয়ালে পিঠ লেগে গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের মূল্য লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। জাতীয়করণ না হলে বেচে থাকা দায়। তাই আমরা সকল শিক্ষক সমাজ , গ্রুপ একযোগে অনশন করছি ও তা বাস্তবায়ন পর্যন্ত আমরা আন্দোলনে বদ্ধ পরিকর।
মাননীয় মন্ত্রী মাননীয় মহা পরিচালক আমাদের ন্যায্যদাবী দাওয়ার প্রতি একটু গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় করণে দাবী বাস্তাবয়ন করুন। কারণ শিক্ষা অবহেলিত রেখে জাতীয় উন্নতি চিন্তা করা কিংবা Digital Bangla গড়ে তুলা সম্ভব নয়। তাই জাতীয়করণের একযোগে ঘোষনা দিয়ে আমাদের ন্যায্য দাবী বাস্তাবয়নকরুন। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু থাকলে হয়তো শিক্ষকদের রাজপথে অনশন করতে হতো না।
আমরা আশা করি মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা একযোগে জাতীয়করণের ঘোষনা দিবেন। জাতীয়করণের আনন্দবার্তা নিয়েই শিক্ষক সমাজ ঘরে ফিরতে চান। আর আমরা চাইনা আরো প্রাণ হাসি ফুটক। শিক্ষক সমাজ ফিরে পাক তাদের ন্যায্য অধিকার। অশিক্ষা অন্ধকারের করাল গ্রাস থেকে জাতী পাক মুক্তি।
লেখক:
বুলচান্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক
আহমদ আলী আনোয়ার
এমএম. বিএসএস-বিএড
ধর্ম-বিষয়ক সম্পাদক, বেসরকারী শিক্সক ও কর্মচারীর্ ফোরাম
সুনামগঞ্জ সদর, সুনামগঞ্জ।