শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা গত শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিলে শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়। এর আগে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে রনিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্টের এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলে জানিয়েছে বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)।
দ্য গার্ডিয়ান ও এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। গত ২৬ অক্টোবর রাজাপক্ষেকে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে বিক্রমাসিংহে তাঁকে বরখাস্ত করার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে এখনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করছেন।
শ্রীলঙ্কার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী অনুসারে, পার্লামেন্টে ভোটাভুটি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত করতে পারবেন না। আর পার্লামেন্টে ভোট হলে বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো যাবে না। কারণ, সিরিসেনার দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ) ও রাজাপক্ষের দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির মিলিত আসনের সংখ্যা ৯৫ এবং বিক্রমাসিংহের দল ইউএনপির আসনসংখ্যা ১০৬। সমর্থন বেশি থাকায় ভোটাভুটিতে বিক্রমাসিংহের পক্ষে ভোট বেশি পড়বে।
এর আগে ২০১৫ সালে দীর্ঘ সময় ধরে প্রেসিডেন্ট পদে থাকা রাজাপক্ষেকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সিরিসেনা। ওই সময় সিরিসেনার জোটে ছিলেন বিক্রমাসিংহে। তবে সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহে জোটের মধ্যে নানা সময়েই মতবিরোধ দেখা দেয়। সবশেষ ভারতকে একটি বন্দর লিজ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে এই দুজনের মধ্যে চরম মতবিরোধ দেখা দেয়।
বিক্রমাসিংহের দল ইউএনপি প্রেসিডেন্টের এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে বলে জানিয়েছেন বিক্রমাসিংহের মন্ত্রিপরিষদের অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা। সাংবাদিকের তিনি বলেছেন, ‘আমরা আদালতে লড়াই করব, পার্লামেন্টে লড়াই করব এবং নির্বাচনে লড়াই করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৫ সালে সিরিসেনাকে আমরা সমর্থন দিয়েছিলাম এই আশায় যে তিনি এ দেশের নেলসন ম্যান্ডেলা হবেন, কিন্তু তিনি নিজেকে “বিশ্বাসঘাতক” হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি ম্যান্ডেলা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুগাবে (জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে) হয়েছেন।’
এদিকে সিরিসেনার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। কলম্বোয় বিদেশি দূতাবাসগুলো সিরিসেনার এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক বলে নিন্দা জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন, এতে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি।
অস্ট্রেলিয়াও উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, এ ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন ও হতাশ। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিজ পায়নে বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ শ্রীলঙ্কার বহুদিনের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে খর্ব করেছে এবং এটা স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।