বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ অপরাহ্ন
আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। আজ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ১৯৭১ সালে আজকের দিনে শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম।
জাতির ইতিহাসে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন ছোট কোনো বিষয় নয়। একে একে অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে আছে। বিগত বছরগুলোতে অর্জিত হয়েছে অনেক সাফল্য অনেক গৌরবগাথা।
বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় অর্জনই ছিল আমাদের স্বাধীনতা। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা আমাদের স্বাধীন অস্তিত্বকে তুলে ধরেছে পৃথিবীর মানচিত্রে। স্বাধীন জাতির এ অর্জন গৌরবের, অহঙ্কারের। দেশমাতৃকার স্বাধীনতা সংগ্রামের সব শহীদ ও আত্মদানকারীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। অযুত সালাম স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর সেনানীদের প্রতি। আজ শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় পত্রিকাগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে সম্প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেই সাথে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি। দিবসটিতে সারা দেশে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
২৫ মার্চের কালরাতে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক নেতৃত্ব মুক্তিকামী নিরস্ত্র জনতার ওপর যে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায় তাতে চূড়ান্ত হয়ে যায় আমাদের স্বাধীনতার পথচলা। ২৫ মার্চের গণহত্যা পরিচালনার সময় পুলিশ, তৎকালীন ইপিআর এবং বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে বাঙালি সৈনিক ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরদিন থেকে শুরু হয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ। যে যার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে চূড়ান্ত সেই যুদ্ধে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিপাগল মানুষ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ইঙ্গিত লাভ করে। এরপর সমস্যা সমাধানে ১৬ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ আলোচনা ব্যর্থতার দিকে গড়াতে থাকায় অনেকেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মার্চের সেই উত্তাল দিনগুলোতে এভাবে প্রস্তুত হতে থাকে যুদ্ধের ক্ষেত্র।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের কাছ থেকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকশ্রেণীর হাতে। তখন পাকিস্তান নিয়ে মোহভঙ্গ হতে থাকে এ অঞ্চলের মানুষের। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে বারবার রাজপথে নামতে বাধ্য করা হয়। এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি শাসকশ্রেণীর উদাসীনতা এবং বঞ্চনার জবাব দেয়া হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে। এতে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু শাসকশ্রেণী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে তাদের হাতেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ফলে আবার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে রাজপথে নামতে বাধ্য করা হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের শোষিত মানুষের ন্যায্য দাবি আদায় এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন ১৫ মার্চ আলোচনার জন্য ঢাকা আসেন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। ১৬ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা শুরু করেন তিনি। মূলত আলোচনার নামে এটি ছিল সময়ক্ষেপণ মাত্র। পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা প্রতিদিন সমস্যা সামাধানের আশ্বাস দিয়ে গোপনে অস্ত্র এবং সৈন্য জমা করতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানে। ২৪ মার্চ উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা ঢাকা ত্যাগ করেন আন্দোলন দমনে গণহত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করে।
২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার নির্দেশ দিয়ে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করাচির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন ইয়াহিয়া খান। রাত ১১টায় তিনি করাচি পৌঁছার খবর ঢাকায় পাঠানোর পরপরই শুরু হয় গণহত্যা অভিযান। রাজপথে নেমে আসে ট্যাংক ও সশস্ত্র সৈন্য। পূর্ব পাকস্তানের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য শুরু হয় ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড। চাপিয়ে দেয়া হয় অন্যায় যুদ্ধ। শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের সেই রক্তক্ষয়ী লড়াই আর অশেষ ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় প্রিয় স্বাধীনতা।
আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে : রাষ্ট্রপতি
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছেন, স্বাধীনতার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে। জাতীয় সংসদকে পরিণত করতে হবে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ জন্য সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।
ঐতিহাসিক এই দিনে তিনি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি স্বাধীনতা পেয়েছে। এ ছাড়া তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক, বিদেশী বন্ধু এবং সর্বস্তরের জনগণকে, যারা অধিকার আদায় ও মুক্তিসংগ্রামে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন।
বাংলাদেশ অচিরেই মর্যাদাশীল হবে : প্রধানমন্ত্রী
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বীর বাঙালি মাত্র নয় মাসে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, ইনশা আল্লাহ।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ। এ অর্জনকে অর্থবহ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, মহান স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নেয়ার আহ্বান জানান।