বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ অপরাহ্ন
বাঙালির বহু বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সুদূরপ্রসারী বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ নামের নতুন একটি জাতিরাষ্ট্র। আজ বুধবার (১৭ মার্চ) সেই মহানায়কের ১০১তম জন্মদিন।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসাবেও উদযাপন করা হয়। এবারের জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর হৃদয় হোক রঙিন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃখক বাণী দিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোতেও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপন করা হবে। দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি দশ দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এর আগে গতবছর বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও করোনা ভাইরাসজনিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে মুজিব বর্ষের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করে উদযাপিত হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আগামীকাল ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশী অতিথিরা অংশগ্রহণ করবেন।
তিনি জানান, অনুষ্ঠানমালায় প্রতিদিন পৃথক থিমভিত্তিক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিওভিজুয়াল এবং অন্যান্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার থিমগুলো হলো- ১৭ মার্চ ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়’, ১৮ মার্চ ‘মহাকালের তর্জনী’, ১৯ মার্চ ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’, ২০ মার্চ ‘তারুণ্যের আলোকশিখা’, ২১ মার্চ ‘ধ্বংসস্তূপে জীবনের গান’, ২২ মার্চ ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’, ২৩ মার্চ ‘নারীমুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’, ২৪ মার্চ ‘শান্তি-মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’, ২৫ মার্চ ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রা’ এবং ২৬ মার্চ ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’।
দশদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় ১৭ মার্চ, ২২ মার্চ এবং ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ১৭ মার্চ, ১৯ মার্চ, ২২ মার্চ, ২৪ মার্চ এবং ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। এই ৫ দিনের অনুষ্ঠানে বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধানরা সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আগামীকালের অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্, ১৯ মার্চ অনুষ্ঠানে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ মার্চ অনুষ্ঠানে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারী, ২৪ মার্চ অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন।
এ ৫ দিনের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে সীমিত আকারে ৫০০ জন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া, এই ৫ দিনের অনুষ্ঠানসহ অন্য ৫ দিনের অনুষ্ঠানমালায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ধারণকৃত বক্তব্য প্রদর্শন করা হবে। প্রত্যেকদিনের অনুষ্ঠান টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
এদিকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দিবসটি উদযাপনে স্কুল-কলেজে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনলাইনে আলোচনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কুইজ, স্মরণিকা প্রকাশ ও কবিতা আবৃতি ইত্যাদি অনুষ্ঠান নিজ উদ্যোগে আয়োজনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এসব নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করা করা হয়েছে।
অধিদপ্তর থেকে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, ১৭ মার্চ সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস ভবনে পতাকা বিধি অনুসারে সঠিক মাপ ও রঙের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে। এদিন স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এদিন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-অফিস ভবনে সৌন্দর্যবর্ধন, সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করতে হবে, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা এবং মহান স্বাধীনতার মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, উদ্ধৃতি, জন্মশতবার্ষিকীর লেগো সম্বলিত নান্দনিক ড্রপডাউন ব্যানার ভবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মাপ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস নিজস্ব ডিজাইনে পোস্টার তৈরি করতে পারে তবে পোস্টার, ব্যানার বা ফেস্টুনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির ছবি ব্যবহার না করা বাঞ্ছনীয়। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির ওয়েবসাইটে (http://www.mujibl00.gov.bd) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে পোস্টারের টেমপ্লেট দেয়া আছে। প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সে পোস্টার মুদ্রণ করে অথবা ড্রপডাউন ব্যানার হিসেবে প্রস্তুত করে ব্যবহার করতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে পোস্টারের নীচে সৌজন্য হিসাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা অফিসের নাম ব্যবহার করা যাবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসগুলোর মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা আয়োজন করতে হবে।
১৭ই মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা অফিসগুলোকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনলাইনে আলোচনা অনুষ্ঠান, অনলাইনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মরণিকা প্রকাশ, অনলাইনে কুইজ ও কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদির মধ্যে যেগুলো সুবিধাজনক সেগুলো প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে আয়োজন করবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অফিসে এলইডি স্থাপিত আছে সেখানে স্বাধীনতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপরে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র প্রদর্শন করতে হবে।
অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা ১০০ (একশত) শব্দে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কল্পনায় ধারণ করে পত্র লিখবে। পত্রে তারা জাতির পিতাকে উৎসর্গ করে জানাবে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দৃপ্তপদে অগ্রসর হওয়া বাংলাদেশের কোন কোন অর্জন কেন, কিভাবে তাদেরকে মুগ্ধ করেছে। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতাকে তারা দেশের জন্য কি কি অবদান রাখতে চায় সেটাও জানাবে। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সুবিধাজনক সময়ে এ আয়োজন করা যাবে। গ্রুপ বিভাজন অনুযায়ী ক গ্রুপ-ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি, খ গ্রুপ-নবম ও দশম শ্রেণি, গ গ্রুপ-একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি এবং ঘ গ্রুপ- স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ কার্যক্রমে অংশ নেবে। প্রত্যেক গ্রুপে শ্রেষ্ঠ তিনজন পত্রলেখককে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতি গ্রুপের সেরা একটি পত্র 17march20210gmail.com ই-মেইলের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাতে হবে।
এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে সব মাদরাসায় ১০ দিনব্যাপী ধারাবাহিক অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত এসব অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ইতোমধ্যে দেশের তিন সরকারি মাদরাসা, মাদরাসা বিএমটিটিআইসহ সব মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সুপারদের এ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬-দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়াল্ড রেজিস্টার এ অর্ন্তভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অন্যদিকে, ২৬ মাচর্ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীর বহু আকাঙ্খিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম।
সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসি’র এক জরীপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী নির্বাচিত হন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বাসভবনে জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্য সাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেয়া হয়। বিদেশী ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তার প্রশংসা করেন।
বিগত বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তী কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ক্যাস্ট্রো বলেন, ‘আমি হিমালয়কে দেখেনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি ছিলেন হিমালয় সমান। সুতরাং হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি। শ্রীলংকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মণ কাদির গামা (নৃশংস হত্যার শিকার) বাংলাদেশের এই মহান নেতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান, তাঁর স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে দেয়া বঙ্গবন্ধু খেতাবে এই দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি দেশের মানুষের গভীর ভালবাসা প্রতিফলিত হয়।’ ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মার্চ নগরীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন শেষে মন্তব্য বইয়ে এমন মন্তব্য লিখেছিলেন।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মন্তব্য বইয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সম্মোহনী এবং অসীম সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর জনগণের নেতৃত্বদান করেছিলেন।
জার্মানীর সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান উলফ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেন, ‘এই স্মৃতি জাদুঘর আমাদের একজন মহান রাষ্ট্রনায়ককে স্মরণ করিয়ে দেয়, যিনি তার জনগণের অধিকার ও মর্যাদার জন্য লড়াই করেছিলেন এবং অতিদ্রুত স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।’
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি স্বাধীনতার জন্য প্রতিকূলতা ও বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে অটল সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছেন।’
dainikshiksha