বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ অপরাহ্ন
আমিনুল হক
‘ফুল ফুটুক বা নাই ফুটুক আজ বসন্ত’। বয়সে নুইয়ে পড়লেও বসন্তের আগমনে তারুন্য ফিরে পায় দর্শনার্থিরা। বসন্তের অপরূপ সাজে সজ্জিত ‘শিমুল বাগান’। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই সৌন্দর্যের ঝলকা নিয়ে দাঁিড়য়ে আছে ‘শিমুল ফুল’। ভ্রমন পিপাসু দর্শনার্তিরা আনমনে ঘুরপাক খেয়ে খোঁজে বেড়ায় তার আপন ঠিকানা। আর শিমুলবাগানের সেই অপরূপ দৃশ্য আপনি দেখতে পাবেন মাদার ফিসারিজ খ্যাত তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটকদের ভীড় জমে নানান দেশ থেকে আগত পাখ-পাখালির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। অপর দিকে শীতের শেষে বসন্তের শুরুতেই এক অপরূপ রূপে সেজে আছে তাহিরপুরের জয়নাল আবেদিন শিমুল বাগান। এ যেন ফাগুনের হাওযা লেগেছে গায়।
বাগানটি মেঘালয়ের পাদদেশ ঘেরা ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এপারে রুপের নদী সীমান্তনদী জাদুকাঁটা-মাহারামের তীর ঘেষা অবস্থিত। দেশ-বিদেশের লাখো ভ্রমণ পিপাসু প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকদের আগমণের প্রহর গুনছে। ২০০২ সালে তাহিরপুরের বাদাঘাট উওর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন পার্শ্ববর্তী বড়দল উওর ইউনিয়নের মাণিগাঁও গ্রামে মরুময় বালু চরে শতবিঘা পতিত জমিতে ১ হাজার শিমুল তুলোর গাছ রোপনের মধ্য দিয়ে ওই বাগান গড়ে তোলেন।’শিমুল গাছের ফাঁকে ফাঁকে বাগানের ভেতরই রয়েছে হাজারও দেশীয় লেবুর চারা।’ তিনি পরবর্তীতে মৃত্যু বরণ করলেও ওই দৃষ্টি নন্দন বাগানের কারনেই আজো দেশী-বিদেশী লাখো পর্যটন ভ্রমণ পিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমিরা এ বাগানে বেড়াতে এসে বৃক্ষপ্রেমি প্রয়াত জয়নাল আবেদীনের কথা স্মরণ করেন শ্রদ্ধার সাথে। প্রয়াত জয়নাল আবেদীনের পুত্র বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আপাতাব উদ্দিন বলেন, বাগান তৈরীতে আমার পিতার কয়েকটি লক্ষ ও উদ্দেশ্য ছিল। এর একটি হল নদী তীরবর্তী ওই পতিত মরুময় বালু ভুমিকে খর¯্রােতা সীমান্ত নদী জাদুকাটা মাহারামের আগ্রাসী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা, বাগানের গাছের পাতা ঢালপালা থেকে লাকড়ি , দেশীয় তুলা , গবাধি পশুর জন্য সবুজ ঘাঁস সংগ্রহ করা। এছাড়া প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পর্যটকদের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশাপাশি আরেকটি পর্যটন স্পট তৈরি করা। তিনি আরো বলেন, শুধু বসন্তেই বছরের যে কোন দিনে বাগান দেখতে দেশ বিদেশ থেকে হাজারো লোকজন এখানে এসে ভিড় জমান। তাদের প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরে যান। এই আমাদের প্রাপ্তি। তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, আমাদের তাহিরপুরে গড়ে তোলা আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীনের এ শিমুল বাগান শুধু তাহিরপুর বাসীর নয় গোটা জেলা বাসীর ঐতিহ্যের দাবিদার। এখানে প্রতিনিয়ত এ বাগানে চলচ্ছিত্র, গান, বিজ্ঞাপন চিত্রের শুটিং করতে বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যেমন ছুটে আসছেন তেমনি, দেশ বিদেশের পর্যটক ও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীরাও তাদের ষ্টাডি ট্যুর করতে এ বাগানে ছুটে আসছেন। দেশের যে কোন স্থান থেকে সরাসরি বাস, মাইক্রো বাস চার চাকার যান বাহন নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের আব্দুজ জহুর সেতু হয়ে লাউড়েরগড়-বিন্নাকুলি-মিয়ারচর যানবাহন রেখে খেয়া পাড়ি দিয়ে পরবর্তীতে লেগুনা, ইজি বাইক, ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলে করে এ বাগানে অনায়াসেই যাতায়াত করা যায়। এছাড়াও দেশের যে কোন স্থান থেকে যাবাহনযোগে সুনামগঞ্জ হয়ে তাহিরপুর উপজেলা সদরে বাহনটি রেখে ফের ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল নিয়ে বাদাঘাট হয়েও সরাসরি এ বাগানে যাতায়াত সুবিধা রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ জানান, বাগানে ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে নিরাপত্তার ব্যাবস্থা রয়েচে। পর্যটকদের যে কোন ধরণের সহযোগীতার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আমিনুল হক
সুনামগঞ্জ