বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন
রুহুল আমিন :: সুনামগঞ্জ শহরের মুহাম্মদপুরে প্রায় অর্ধশতাধিক উপস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় তরুণ কথাসাহিত্যিক আবদুল ওয়াদুদ নোমান রচিত ‘স্বপ্ন থেকে সংসার’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনু্ষ্ঠান। ২৪ জানুয়ারি এশার নামাজের পর দ্বীনিয়া মাদরাসার তরুণ শিক্ষক শাহ মুশাহিদ আলম ফয়সল এর উপস্থাপনায় শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। প্রথমেই কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফিজ মওদুদ আহমদ। অতঃপর স্বাগত বক্তব্য দেন আব্দুস সাত্তার মুহাম্মাদ মামুন।
একনজরে ‘স্বপ্ন থেকে সংসার’ গ্রন্থের ধারণা দেন বইয়ের লেখক আবদুল ওয়াদুদ নোমান। অতিথিবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়ে বই নিয়ে চিত্তাকর্ষক কিছু কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তার বইটির চিন্তাসূত্র আরববিশ্বের শাইখ আলি তানতাবির লেখাগুলো, মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. মাহাথির মুহাম্মাদের মাধ্যমে সেই চিন্তার প্রয়োগ দেখেও তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তিনি প্রভাবিত হয়েছেন আবু তাহের মিসবাহ সাহেবের বিবাহসম্পর্কিত একটি লেখা পড়েও। তিনি আরও বলেন যে, মানুষ দাম্পত্যজীবন নিয়ে অনেক কিছু জানতে চায় কিন্তু সঠিক জায়গা পায় না। ভুল পথে পা বাড়ায়। এইসব উপলব্ধি থেকে তার বইটা লেখা। তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব সংক্ষেপে গোছালোভাবে বইটি সম্পর্কে উপস্থিত সবাইকে ধারণা দেন।
আমন্ত্রিত অতিথিগণের মধ্যে চাইল্ড হেভেনের পরিচালক প্রবীণ লেখক আজিজুল হক মাসুক তাঁর আলোচনায় বলেন, বইটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। মাদরাসা পড়ুয়াদের ইসলামি বইপত্রের প্রচ্ছদ সাধারণত মিনার বা খেজুর এই জাতীয় হয়ে থাকে। তো তিনি এতে ব্যতিক্রমতা দেখিয়েছেন এবং মননশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। বইটির ভাষা প্রাঞ্জল, সুখপাঠ্য। এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আমাদের ভারত উপমহাদেশে বেশি লিখেছেন আশরাফ আলি থানবি রাহ.। মাওলানা আব্দুর রহীম সাহেবও মূল্যবান বই লিখেছেন। তো আমি মনে করি সেই ধারায় এবার সংযোজন হলো আমাদের আবদুল ওয়াদুদ নোমান সাহেবের এই বই। বইটি বিভিন্ন কারণে আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। এটা সবার পড়া উচিৎ।
দ্বীনিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলী নূর সাহেব কুরঅান হাদিসের আলোকে বইয়ের বিষয়বস্তু কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরেন। এবং তিনি বলেন, আমি মনে করি এই বইটা প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে থাকা দরকার।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাস্টার আরশাদ আলী বলেন, বইটা আমি পড়েছি। বই নিয়ে অনেক কথাই বলার আছে। বইয়ের শেষ পৃষ্টায় পাঠকের মন্তব্য কলামে খুব সংক্ষেপে আমি কয়েকটি কথা লিখেছি, তা হলো- ১। বইয়ের নামকরণ যথোপযুক্ত হয়েছে। ২। বইয়ের বিষয়বস্তু যুগোপযোগী। ৩। লেখকের সৃজনশীল প্রতিভা প্রসংশনীয়। ৪। ইংরেজি শব্দের বহুল ব্যবহার হয়েছে। ৫। মাঝে মাঝে বানান বিভ্রাট চোখে পড়লো। ৬। বইটির বহুল প্রচার কামনাযোগ্য। ৭। লেখকের হাতে সৃষ্ট আরও বই চাই।
প্রধান আলোচক হিসেবে জামেয়া আলহেরার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সারগর্ভ একটি বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, এপিজে আবুল কালামের ভাষায়, মানুষ ঘুমিয়ে যা দেখে তা মূলত প্রকৃত স্বপ্ন নয়, বরং প্রকৃত স্বপ্ন হলো তা, যা মানুষকে ঘুমোতে দেয় না। এই বইয়ের লেখক আমাদের বাস্তবাদী কিছু স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যা আমাদের জীবনে অত্যন্ত জরুরি। এবং এই স্বপ্নগুলো কীভাবে বাস্তবরূপ দেওয়া যায় তারও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সুখি সাংসারিক জীবনের জন্য অনেক টিপস বাতলে দিয়েছেন। আসলে বইটি পড়লে বুঝা যায় তিনি অনেক স্টাডি করে, গবেষণা করে বইটি লিখেছেন। ভাষার মাধুর্যতাও আসাধারণ। আমি সংক্ষেপে এই কথাটাই বলবো যে, এটি আমাদের জন্য একটি প্রেসক্রিপশন। বিয়ের আগের জন্যও, বিয়ের পরের জন্যও। সুখে থাকার জন্যও, কোনো সমস্যায় পড়লে তার সমাধানের জন্যও। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন যেভাবে আমরা যতন করে রাখি, এই বইটিও সেভাবে প্রতিটি ফ্যামেলিতে যতন করে রাখতে হবে। না, কখনো হারানো যাবে না। আমি লেখকের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি। বইটি প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক সে কামনা করছি।
অতঃপর অনু্ষ্ঠানের সভাপতি দ্বীনিয়া মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন আব্দুল্লাহ সাহেব অতিথিবৃন্দকে নিয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাস্টার আব্দুল কাদির, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহেদ আলী, দামুদরটুপি মাদরাসার সুপার শহিদুল ইসলাম, প্রাইমারি স্কুলে হেড মাস্টার বেলায়েত হোসাইন, সাংবাদিক আলমগীর হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম আরজদ আলী, বিশিষ্ট মুরুব্বী আলাউদ্দীন, চাইল্ড কেয়ারের শিক্ষক মাওলানা আব্দুল আলীম, হা. নুর আহমদ, ভার্সিটির শিক্ষার্থী সুমন, টিপু, রুবেল প্রমুখ।