বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন
মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম ::
খা+না=খানা (যা খেয়ে আমরা জীবন ধারণ করি):- মানুষের জীবন ধারণের জন্য খানা (খাদ্য বা খাবার এবং ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি খ্যাত হযরত শাহজালাল (র.) এর এলাকা সিলেটে যাক খানি বলা হয়) …
আগের কার দিনের খানা আর বর্তমান সময়ের খানা পার্থক্য শুধু স্বাদে। আমার জন্ম পারিবারিক ভাবে এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলিতে (বড় ফ্যামিলি)। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন মিলে দীর্ঘ একটি সময় (১৫ বছর+) উপকূলীয় এক দ্বীপে বড় হয়ে ওঠা। বলে রাখা ভাল সাগরের বুকে গড়ে ওঠে দ্বীপ আর নদীর বুকে গড়ে ওঠে চর। বর্তমানে সেই দ্বীপটি ৬টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে বাংলাদেশের ৪৮৪ তম উপজেলা রাঙ্গাবালী (২৫ ফেব্রুয়ারী,২০১২) পটুয়াখালী, বরিশাল, বাংলাদেশ নামে বিশ্বের বুকে পরিচয় লাভ করেছে।
রাঙ্গাবালী নামক প্রিয় এই দ্বীপটির দক্ষিণ দিকে বে অব-বেঙ্গল (বঙ্গপ উপ- সাগর, যা ভারত মহাসাগরের একটি উপসাগর), পূর্ব দিকে তেতুলিয়া নদী যার আপর প্রান্তে ভোলা জেলার চর ফ্যাশন উপজেলার অংশ বিশেষ চর কুকরী-মুকরী, উত্তর দিকে উত্তাপ্ত সাত কিলোমিটার দীর্ঘ নদী আগুনমুখা, নদীটির এ পাড়ে গলাচিপা উপজেলার পানপট্রি, আর পশ্চিম দিকে রামনাবাদ চ্যানেল এবং এই চ্যানেলের পশ্চিম প্রান্তে আন্ধারমানিক নদী তীরবর্তী টিয়া খালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া স্থানে বাংলাদেশের তৃতীয় এবং একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর পায়রা। যা ১৯ নভেম্বর, ২০১৩ সালে ভিত্তি প্রস্তর বা কাজ শুরু হয়ে ১৩ আগস্ট,২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
এই সমুদ্র বন্দর থেকে সোজা দক্ষিণ পশ্চিম দিকে ৩০. ০৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রুপে যৌবনে ভরপুর সাগর কন্যা কুয়াকাটা (আয়তন ১৮ কিলোমিটর, একই সাথে সূর্যোদ্বয় (গঙ্গামতি) ও সূর্যাস্ত (ফাতরার বন, সুন্দর বনের অংশ বিশেষ) দেখাযায়। পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে উত্তর দিকে চোখ ঘুরালেই দেখা যায় দেশের সবচেয়ে বড় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা। এই জনপদের আলো বাতাসের ঋণ কোন দিন শোধ করতে পারার নয়, মায়ের মত ভালবাসি এই জনপদকে।
এবার ফেরা যাক মূল আলোচনায়- সকলের কাছে একটি প্রশ্ন রেখেই আসল আলোচনায় আসা যাক, বলেনতো আগেকার দিনের বিয়ের বাড়িতে খেতে গিয়ে বাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বে শুকনা ধান গাছে (নাড়ায়) বসে এবং কলা পাতার প্লেটে খাওয়ার সেই স্বাদ কী এখন পাওয়া যায়? অবশ্যই অনেকে বলতে বাধ্য হবেন না! বাংলাদেশ বিশ্বের ৪র্থ ধান উৎপাদনকারী দেশ। ০৮ নভেম্বর, ২০২০ এ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন চাল উৎপাদিত হয়েছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় আমরা খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ তাহলে প্রশ্ন হল বর্তমানে (২০২১) মানুষের জীবন মান উন্নত হলেও, খাবারের অভাব আগের মত না থাকলেও সেই স্বাদ কিন্তু আজ পাওয়া যাচ্ছে না।
আজ থেকে ১৫ থেকে ২০ বছর পিছনের দিকে ফিরে তাকালে অনেক স্মৃতিই কিন্তু আমাদের মনে পড়বে।পরিবারে পাচ থেকে ছয়জন ভাই- বোন থাকলে “মা” সকাল বেলা একটি ডিম ভেজে একটু গরম ডাল এবং কিছু পোড়া মরিচ সকলকে সমান ভাবে ভাগ করে দিত, সেই খাবারে অনেক তৃপ্তি পেলেও আজ খাবারের অভাব কম থাকার পরেও সেই স্বাদ কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে সমস্যটা কোথায়? দেখেন খা না এই দুই বর্ণ মিলেই খানা, তার মানে খাও আবার না খাও তার নাম খানা।
সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের শরীরকে একটি নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ করেছেন, মানুষ এই সীমা কখনোই অতিক্রম করতে পারবেনা। যখনই সীমালঙ্গন হবে তখনই ঘটবে বিপত্তি। সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা অসীম তিনি ছাড় দেন কিন্তু ছাড়েন না। আমরা মানুষ টাকা পয়সা আয়ের যত চিন্তা করি তা মূলত আমাদের ভাল থাকার জন্য, ভাল খাবার, ভাল পোষাকের জন্য।
আমরা যা কিছুই করি না কেন আয় হালাল না হলে খাবারে যেমন স্বাদ পাওয়া যাবেনা তেমনি কবরে গেলেও শান্তি পাওয়া যাবেনা। দেখেন এই খাবারের সাথে আমাদের পৃথিবীর শান্তি এবং মৃত্যুর পরের শান্তি নির্ভর করে। খাবারের জন্য দরকার অর্থ আর এই অর্থ উপর্জন হালাল না হলে সারা দিনরাত ইবাদত আশায় গুরেবালি ছাড়া আর কিছুই নয়।
সুতারং সৃষ্টিকর্তার কাছে মনে প্রাণে আমাদের চাওয়া হোক আমরা যেন হালাল উপর্জন করে পৃথিবী ও পরকাল দুই দিকেই শান্তিতে থাকতে পারি।
লেখক : মো. আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম: কলামিস্ট, শিক্ষাগুরু, প্রাবন্ধিক, আইনজীবী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সমাজকর্মী ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা।