বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ অপরাহ্ন
‘ছন্দে গল্পে আমার নবী স.’ (১ম পর্ব)
আইয়ামে জাহেলিয়া
মো: শফিকুল ইসলাম ::
ধরণী ছিল অজ্ঞতায় ভরা ঘোর কালো অন্ধকার মূর্খতাকেই শ্রেষ্ঠ রূপে মানত সবে দিবাকর। নারী কেবল ভোগ্যপণ্য, ছিল না কোনো অধিকার দাসত্বকেই করত বিধান কষ্টের পিষে একাকার।
হয় অপায়া ভাবতো সবে, নয় অশুভের স্বীকার জীবন্ত তাই দিত কবর, হয়ে পাষণ্ড বিকার। হত্যাযজ্ঞ চলত তখন, ছিল না কোনো প্রতিকার যুদ্ধে যুদ্ধে কাটত সময় দিবস কিংবা নিশাকর।
ধর্মীয় জ্ঞান ছিল না কিছুই, ছিল শুধু অহংকার "জোর যার মুল্লুক তার" এই নীতিতে সরকার। মূর্তি পূজা, চন্দ্র পূজা, পূজা ছিল নানা প্রকার দেবতা তাদের শান্তি দেবে, করবে নাকি উপকার!
আল্লাহ-খোদায় ছিল না বিশ্বাস, চলত শুধু কুসংস্কার পরকাল বলে নাইরে কিছু দুনিয়ায় পাবে পুরস্কার। এ ভয়াল মাঝে কেউ যদি কোন চাইত কিছুর সংস্কার জীবন তাহার নিত ছিনিয়ে আসতো শত হুংকার। এলেন ভবে আরব মাঝে আলো ছড়াতে সত্যিকার দূর করিতে, ভুল শুধিতে, জাহান করিতে পরিস্কার।
আইয়্যামে জাহিলিয়া পর্ব
“আইয়্যাম” শব্দের অর্থ সময় বা যুগ এবং “জাহেলিয়া” শব্দের অর্থ অজ্ঞতা, মূর্খতা বা তমশা। সুতরাং আইয়ামে জাহেলিয়া অর্থ তমসা, বা অজ্ঞতার যুগ। প্রকৃতপক্ষে আইয়্যামে জাহিলিয়া বলতে সেই যুগকে বোঝায় যে যুগে আরবে কোন নিয়ম কানুন ছিল না, কোন নবীর আবির্ভাব ঘটেনি এবং কোন ঐশী কিতাব নাযিল হয় নাই
ঐতিহাসিকগণ ইসলামের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী এক শতাব্দিকালকে আইয়ামে জাহেলিয়া বলে উল্লেখ করেছেন। এসময়ই আরব দেশে তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবন অধঃপতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। বিভিন্ন পাপাচার, ব্যভিচার, দুর্নীতি, কুসংস্কার, অনাচার, অরাজকতা, ঘৃণ্য আচার-অনুষ্ঠান ও নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডে কলুষিত হয়ে পড়েছিল সমাজ। যুদ্ধ, নারী ও মদ নিয়ে তারা সর্বদা লিপ্ত থাকত। সে যুগে নারীরা ছিল ভোগের সামগ্রী। বাজারে পণ্যের মত হস্তান্তরযোগ্য ছিল নারী। পুরুষ কর্তৃক নারীরা সর্বত্র নিগৃহীত হত।
সে যুগে কন্যা সন্তানকে অপমানও অভিশাপ মনে করে ক্ষেত্রবিশেষ জীবন্ত কবর দিতেও তারা কুণ্ঠিত হতো না। এছাড়া তৎকালীন আরবের দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল। দাস-দাসীদের কোন সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার ছিল না। পণ্যদ্রব্যের মত হাটে বাজারে কেনা বেচা হতো।
এ সময়ে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা না থাকায় গোত্রে গোত্রে দ্বন্দ্ব-কলহ এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এ গোত্র-কলহ কখনো বংশানুক্রমিকভাবে চলত। “খুনের বদলে খুন” এ ধারায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ত বছরের পর বছর। অন্ধকার যুগে আরবে গোত্রীয় সংঘাতের কারণে ১৭০০ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। উটকে পানি খাওয়ানোর সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে বনু বকর ও বনু তাগলিব গোত্রের মধ্যে সুদীর্ঘ ৪০ বছর ব্যাপী যুদ্ধ চলছিল।
আরবদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল নানা রকমের। পৌত্তলিক জড় পূজারী ও অংশীবাদী ইহুদি, খ্রিষ্টান, সাবেরী, নক্ষত্র পূজারী এবং এক আল্লাহতে বিশ্বাসী হানিফ সম্প্রদায়। পুতুল পূজা ও পৌত্তলিকতা ছিল আরবদের সারস সর্বজনীন ধর্ম। পবিত্র কাবা গৃহের ৩৬০ টি প্রতিমা রাখা হয়েছিল। লাত, মানাত, উজ্জা প্রভৃতি দেবদেবী ছিল বিখ্যাত। আরব বেদুইনদের বিভিন্ন জড়বস্তু, বৃক্ষ, প্রস্তর, গুহা, বালির স্তুপকে পূজা করত।
মোটকথা- নীতি-নৈতিকতা, শিক্ষা-সভ্যতা, মানবতাবোধ, ধার্মিকতার কোনো পরিবেশ ছিল না। তবে আরবদের জীবনে কিছু প্রশংসনীয় দিক ছিল। তাদের ভাষা ছিল সমৃদ্ধ। কাব্যচর্চা, আতিথেয়তা ও নির্ভীকতায় আরবরা ছিল অসাধারণ। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আবির্ভাব ও তার শিক্ষায় এই অমানিশার অবসান ঘটে। আর সত্য-সুন্দরের নতুন আলোয় আরবসহ গোটা বিশ্ব উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
লেখক: মো: শফিকুল ইসলাম, গল্পাকার, ছড়াকার ও শিক্ষাবিদ।