বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন
বারো আউলিয়ার পুন্যভ‚মি ইসলামের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম। চাটগাঁর রাজনীতিতে সৌজন্য এবং সৌন্দর্য বহুকালের পুরনো রেওয়াজ। যা ফল্গুধারার মতোই বয়ে চলেছে। কখনও কখনও এর ব্যতিক্রম ঘটলেও পারস্পরিক সৌজন্য-সম্প্রীতির উদাহরণ বেশিই খুঁজে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামবাসীর একান্ত প্রত্যাশা রাজনৈতিক অঙ্গনের সৌজন্যবোধের চর্চা থাকুক অব্যাহত।
আবোরো তেমনটি দেখা মিললো। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হযরত শাহ আমানতের (রহ.) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। তিনি চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘ধানের শীষের’ প্রার্থী। জিয়ারত করে বের হওয়ার পর তিনি রাস্তায় মুখোমুখি হন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে ‘নৌকা’য় মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ রাজনীতিক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে।
তখনই গাড়ি থামিয়ে ব্যারিস্টার নওফেল বের হন। তিনি এগিয়ে এসে প্রবীণ রাজনীতিক নোমানকে সালাম দিয়ে পরস্পর হাসিমুখে হাত মেলান, কুশল বিনিময় এবং কোলাকুলি করেন। এ সময় নৌকা ও ধানের শীষের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ উপস্থিত এলাকাবাসী তুমুল করতালির মাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ করেন। এরপর দুই প্রার্থী যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় চলে যান।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, একজন রাজনৈতিক সিনিয়র নেতা হিসেবে বিষয়টি নেহায়েৎ সৌজন্যের। তার (নওফেল) পিতা মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আমার মামা-ভাগ্নে ডাকাডাকি ছিল।
অবশ্য ওর সাথে তেমন কিছু ডাকাডাকি নেই। গত ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে হঠাৎ দেখাদেখি হয় চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের দুই হেভিওয়েটের। ‘ধানের শীষের’ প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ‘নৌকার’ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ পরস্পর কুশল বিনিময় ও কোলাকুলি করেন। দুই পক্ষের উপস্থিত নেতা-কর্মীরা স্বাগত জানান।
রাজনীতি সচেতন চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা, ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাজনৈতিক ডামাডোলে চট্টগ্রামের প্রধান দুই বিপরীত মেরু আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের মাঝে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকবে। ভোটের লড়াই থাকবে। তবে জনজীবনে শঙ্কা-ভয়-আতঙ্কের মতো যাতে কোনো কারণ তৈরি না হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বেশিরভাগ সময়কাল জুড়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি পরস্পর প্রতিপক্ষ। এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও চট্টগ্রামে সৌজন্যের ভিন্ন পরিবেশ চোখে পড়ে। যদিও হানাহানির ঘটনাও অনেক। অতীতে বড় দুই দলের নিজেদের অভ্যন্তরীণ কলহ-কোন্দলের কারণে সংঘাতের ঘটনা যত সংখ্যক ঘটে, সেই তুলনায় দুই পক্ষের সংঘাত হয়েছে কম। দুই পক্ষের বিশেষ করে সিনিয়র ও মধ্যম সারির নেতাদের ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক সম্পর্ক উষ্ণ ও মধুর।
মউ (মামা)-ভাগিনা, চাচা-ভাতিজা, বেয়াই, শ্যালক-দুলাভাই, ওস্তাদ-শিষ্য, তালতো ভাই এ ধরনের সম্বোধন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাঝে বহুল প্রচলিত। দেখাদেখি হলেই ঠাট্টা মশ্করা করে আড্ডা জমিয়ে তোলেন নেতারা। সময়ে-অসময়ে একজন আরেকজনের বাসা-বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। ড্রয়িং রুম সরগরম হয়ে ওঠে। সুখে-দুঃখে খোঁজ-খবর নেন।
চাটগাঁর রাজনীতিকদের মিলেমিশে থাকার ইতিবাচক মনোভাব তথা সৌজন্য চর্চা সাধারণ মানুষের বিপুল প্রশংসা কুড়ায়। তা রাজনীতিতে সুবাতাস হিসেবেই দেখেন চট্টগ্রামবাসী।