বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন
• রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা
• এবার রাজধানীর কর মেলা বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে
• এবারের কর মেলায় করদাতারা ১০ ধরনের সেবা পাবেন
• আজ সেরা করদাতাদের সম্মাননা দেবে এনবিআর
কাল মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী আয়কর মেলা শুরু হচ্ছে। এবার রাজধানীর কর মেলা বসবে বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই মেলা চলবে। মেলায় নতুন কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেওয়া থেকে শুরু করে আয়কর বিবরণী পূরণ, জমা ও কর পরিশোধ—সবই করা যাবে। অন্যদিকে আজ সোমবার সারা দেশের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত সেরা করদাতাদের কর কার্ড ও সম্মাননা দেওয়া হবে।
গতকাল রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সেগুনবাগিচার এনবিআর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে বক্তব্য দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। এ সময় এনবিআরের সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে সপ্তাহব্যাপী এই মেলা হবে। মেলা চলবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। এ ছাড়া সব জেলা শহরে চার দিন কর মেলা হবে। এ ছাড়া ৩২টি উপজেলায় দুই দিন করে মেলা হবে। এর বাইরে যেসব উপজেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভালো—এমন ৬৮ উপজেলায় বা গ্রোথ সেন্টারে এক দিন করে মেলা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, টিআইএন নিতে অনেকেই ভয় পান, কী জানি কী হয়। অনেকে মনে করেন, টিআইএন আবেদন ও রিটার্ন ফরমের জন্য টাকা লাগে। কর মেলা আয়োজনের পর থেকে এসব ভয় দূর হয়ে গেছে। আয়কর মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য রাজস্ব সংস্কৃতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া। তিনি বলেন, কর কার্ড ও সম্মাননাপ্রাপ্ত করদাতাদের ভবিষ্যতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (ভিআইপি) মর্যাদা ও সুবিধা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে এনবিআর।
এবারের কর মেলায় করদাতারা ১০ ধরনের সেবা পাবেন। সেবাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা; রিটার্ন জমার জন্য কর অঞ্চলভিত্তিক আলাদা বুথ; নতুন ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন) ও পুরোনো টিআইএনের বদলে নতুন ইটিআইএন নেওয়ার সুবিধা; কর পরিশোধে ই-পেমেন্টের সুযোগ; মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতার জন্য আলাদা বুথ; সোনালী, জনতা ও বেসিক ব্যাংকের বুথের মাধ্যমে কর পরিশোধের সুবিধা; অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (ইআরডি) বিভিন্ন সংস্থার তথ্য জানার জন্য আলাদা বুথ; মেলা প্রাঙ্গণে আয়কর রিটার্ন, ইটিআইএন আবেদন ফরম ও চালান ফরম সরবরাহ; করদাতার জন্য সহায়তা কেন্দ্র এবং ফটোকপি সুবিধা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রতিবারের মতো এবারও ব্যবসায়ী, নতুন করদাতা, তরুণ করদাতা, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে কর কার্ড ও সম্মাননা দেওয়া হবে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ করদাতা ও দীর্ঘ সময় ধরে কর দেন—এমন করদাতাকে বিশেষ সম্মাননা দেবে এনবিআর। আজ রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তবে গতবারের মতো কর বাহাদুর পরিবার সম্মাননা দেওয়া হবে না। গত মৌসুমে রিটার্ন জমা দিলে সঙ্গে সঙ্গে করদাতা পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়েছিল। এবার তাও থাকছে না।
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রামে আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলা নিয়ে প্রতিবছরই করদাতাদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়।
প্রসঙ্গ নির্বাচন ও দুদক
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের করসংক্রান্ত শর্ত পূরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, নতুন করে কোনো বিধিবিধান পরিবর্তন করা হচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে কোনো সংশোধনী আনা হলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচনের কারণে রাজস্ব আদায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হতে হলে বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
দুদকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কর বিভাগে ১৩ ধরনের দুর্নীতি হয়—এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে দুদকেও নানা ধরনের দুর্নীতি বের হবে। উন্নয়ন সঠিকভাবে হলে দুর্নীতি কমে যায়। তিনি আরও বলেন, শুধু কর ও শুল্ক বিভাগকে লক্ষ্য করে কোনো কিছু করা হলে এবং এসব বিভাগে দুদক অফিস করতে চাইলে সেটা হতে দেওয়া হবে না। আয়কর অধ্যাদেশ ও শুল্ক আইনে নেই, এমন কিছু করা যাবে না।