বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ অপরাহ্ন
জহির উদ্দিন বাবর
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
আমাদের দেশে ধর্মীয় যেসব উপলক্ষ্য সমগ্র জাতিকে ছুঁয়ে যায় এর অন্যতম বিশ্ব ইজতেমা। এটি তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ইজতেমা হলেও জাতীয়ভাবে নানা পর্যায়ে এর প্রভাব রয়েছে।
আমাদের দেশের গণমাধ্যম অন্যান্য ধর্মীয় উপলক্ষকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও ইজতেমাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রতি বছর সাধারণত জানুয়ারি মাসেই ইজতেমা হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে সুবিধার কথা বিবেচনা করে ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
এবারও জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা হওয়ার কথা ছিল। বছরদুয়েক ধরে তাবলিগ নিয়ে চলা দ্বন্দ্ব সম্প্রতি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে ইজতেমার আয়োজন নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।
যদিও আগামী ১৫ জানুয়ারি একটি প্রতিনিধি দল দারুল উলুম দেওবন্দে যাওয়ার কথা রয়েছে। তারা মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে দেওবন্দের চূড়ান্ত অবস্থান জেনে দেশে ফেরার পর ইজতেমা আয়োজনের ব্যবস্থা হতে পারে।
বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখে আসছি লাখো প্রাণের স্পন্দনে ইজতেমার সময় প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে ওঠে তুরাগ তীর। কহর দরিয়া খ্যাত এই নদ যেন ইজতেমার কারণে ফিরে পায় তার পূর্ণ যৌবন।
ইজতেমার সময় খোদাপ্রেমিকদের পদভারে শিল্প এলাকা টঙ্গীতে দেখা মিলে মোহনীয় এক দৃশ্যের। হাজার মায়ের সন্তান একই সঙ্গে, একই বিছানায় শুয়ে, একই পাত্রে খেয়ে তিন দিন কাটায়। অপরকে অগ্রাধিকার দেয়ার যে মহান শিক্ষা এর বাস্তব রূপ দেখা যায় টঙ্গীর ময়দানে।
যদিও গত ১ ডিসেম্বর ইজতেমা ময়দানে ঘটে যাওয়া বীভৎস ঘটনা তাবলিগের ঐতিহ্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। যে ইকরামুল মুসলিমিনের বিরল গুণটি তাবলিগ জামাতের লোকেরা ঈর্ষণীয়ভাবে রপ্ত করেছিলেন তারাই সেই গুণটি ঝেটিয়ে বিদায় করেছেন।
এদেশে যতদিন তাবলিগের কাজ থাকবে ততদিন ১ ডিসেম্বরের রক্তক্ষয়ী বীভৎস সেই দৃশ্য লাখো মানুষের অন্তরে রক্তক্ষরণ ঘটাবে।
বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের হলেও এখন এটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এই ইজতেমা আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক কিছুতে প্রভাব ফেলে।
যেমন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আরও পেছানোর জোরালো দাবি ছিল বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেসব যুক্তিতে নির্বাচন পেছানোর দাবি নাকচ করে দেয় এর অন্যতম হলো ইজতেমা।
জানুয়ারির মাঝামাঝি ইজতেমা হবে তাই নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেয় বলে সাফ জানিয়ে দেয় ইসি। ইজতেমার প্রসঙ্গ সামনে আনায় রাজনৈতিক দলগুলোও তা মেনে নেয়। এর দ্বারাই বোঝা যায় ইজতেমাটিকে জাতীয়ভাবে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। সেই ইজতেমা কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হলে, কিংবা না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিলে তা খুবই দুঃখজনক।
প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই ইজতেমা ইতিবাচক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এ উপলক্ষে সারা বিশ্বের দা’য়ীরা বাংলাদেশে আসেন। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণা নিয়ে যান।
বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য আরও অনেক দেশ আগ্রহী ছিল। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে স্থায়ীভাবে আমাদের বাংলাদেশ লটারিতে ইজতেমার আয়োজক দেশ হওয়ার মর্যাদা লাভ করে।
মুসলিম বিশ্বের জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় পর্যায়ে রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত দারিদ্র্যপীড়িত একটি দেশ হিসেবে যেখানে আমাদের পরিচিতি ছিল সারাবিশ্বে সেখানে এখন অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া আজ সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে।
বিশ্ব ইজতেমার মতো একটি সফল সম্মেলনের আয়োজক হওয়াটা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
পবিত্র হজের পর এতো বড় আয়োজন আর বিশ্বের কোথাও হয় না। আমরা চাই না আমাদের কোনো আভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে বাংলাদেশের গর্ব বিশ্ব ইজতেমা অন্য কোনো দেশে চলে যাক।
সব শঙ্কার অবসান ঘটিয়ে যেকোনো মূল্যে বিশ্ব ইজতেমা যথাসময়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হোক-সেটা কোটি হৃদয়ের প্রাণের দাবি। (Ourislam24)
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম