সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন
দেশের সকল অঞ্চলজুড়ে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে অসংখ্য ঘটনা। তৈরী হচ্ছে সংবাদ। ঘটনার পেছনে ছুটে চলেছেন সংবাদকর্মীরা। সম্পাদন করছেন প্রতিবেদন। এসব প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে নিয়মিত। পৌছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে। সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রতিক্রিয়া। সমস্যা- সম্ভাবনা, অপরাধ, বিনোদন, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে সংবাদ প্রচার করছে গণমাধ্যমগুলো। সুনামগঞ্জের প্রেক্ষাপটে ছোট-বড় ঘটনার পেছনে এখানকার বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমগুলোর সংবাদকর্মীরা প্রতিদিন-প্রতিমুহুর্তে তাদের গুরুত্বপুর্ণ সময় ব্যায় করছেন। তথ্য- উপাত্য সংগ্রহ করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্পাদন করছেন প্রতিবেদন। এসব প্রতিবেদনে উঠে আসছে নানা বিষয়। জটিলতা নিরশন ও উন্নয়নে রাখছে ভুমিকা।
দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বের জায়গায় এখানকার অধিকাংশ সংবাদকর্মীরা অটল। তবে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিষয়ে স্থানীয় পাঠকদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রীয়া। এটাও দেশের সকল অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করলে অনেকটাই স্বাভাবিক। কেননা ঢাকার মতো জায়গায় প্রায় ২০০টিরও বেশী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নিয়মিত তাদের কাজ চলমান রেখেছে। যদিও হাতে গোনা ২০ থেকে ৩০টি গণমাধ্যম ছাড়া বাকিগুলোর পাঠক ও দর্শক খুজে পাওয়া কঠিন। সকলেই তাহলে একযোগে কাজ করেও কেনো পাঠকপ্রিয়তায় পিছিয়ে? কেনো তাদের প্রতিষ্ঠানের নামটা অব্দি আপনি বা আমি জানলাম না? প্রশ্ন থাকতেই পারে। আর এর উত্তরটাও জানা প্রয়োজন।
একটা গণমাধ্যমে অবশ্যই যাত্রালগ্ন থেকে উদ্দেশ্য থাকতে হবে। থাকবে পরিকল্পনা। পাঠক বা দর্শকের কাছে দায়বদ্ধতা থাকতে হবে শতভাগ। হ্যা, বছরে কয়েক দিনের জন্য সবার আগে সংবাদ প্রকাশ হয়তো আপনি করতে পারবেন না। আপনার কিছু জটিলতা থাকতেও পারে। সেটি পাঠক বা দর্শকও বুঝেন। মাসে ১দিন আপনার প্রতিষ্ঠানে একটা বড় ঝামেলা হতেই পারে। তাও স্বাভাবিক। আপনি এবং আপনার প্রতিষ্ঠানে যে সংবাদকর্মীরা কাজ করেন তারা সকলেই মানুষ। তাই সব সময় যে আপনি ১০০ভাগ ঝামেলা ও বিপদমুক্ত থাকবেন সেটা সম্ভব না। এক্ষেত্রে যান্ত্রীক, ইন্টারনেট ও সার্ভারজনিত সমস্যাও থাকতে পারে। কিন্তু বাকি যে সময়গুলোতে আপনি প্রকাশনায় রয়েছেন সেখানে আপনি কি করছেন?
গণমাধ্যমে আপনি যে সংবাদ সম্পাদনে সময় ব্যয় করছেন তার মধ্যে সবগুলোই কি আসলেই সংবাদ? সমস্যা টা সেখানেই। আরও বেশ কিছু সমস্যার মধ্যে এই সমস্যাটাকে অবশ্যই বড় করে দেখা উচিৎ। আপনার কাছে এটি ছোট ভুল মনে হলেও এটি আপনার ক্যারিয়ার এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য অবশ্যই বড় ঝুঁকি। যেমন ধরুন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ আজ সারাদিনে ২০হাজার ফাইল স্বাক্ষর করেছেন। হতে পারে এই ফাইলের সংখ্যা ৫০হাজার। এটা অফিসের অন্য কর্তা ব্যাক্তির কাছে অন্যতম এক ঘটনা। সবার কাছে এটি এই দিনের জন্য আলোচনার বিষয়। কিভাবে করলেন এটা তিনি? কেউ এ ঘটনাকে সংবাদের শিরোনাম করে দিলেন। “এক দিনে ৫০হাজার ফাইল স্বাক্ষর করলেন জেলা প্রশাসক”। এটা একটা উদাহরণমাত্র।
অন্যভাবে বললে কিছু ঘটনা থাকে যেটাকে সংবাদে রুপ দেয়ার জন্য একটা এলাকার মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হতে পারে এবং সেখানে মানুষের মৃত্যু অব্দি হতে পারে। অথবা এমন কোন ঘটনা হতে পারে যেটি আপনি জানলেন সবার আগেই। আপনার কাছে মনেহচ্ছে পত্রিকার জন্য ভালো প্রতিবেদন হবে এটি। কিন্তু সেটি প্রচার হলে আপনার দেশ এবং আপনার পার্শবর্তী দেশের সম্পর্কের মধ্যে ভাঙ্গণ দেখা দেবে এবং উভয় দেশের পরস্পর বিরোধী অবস্থান সৃষ্টি হতে পারে। অথবা মাদ্রাসায় পড়ুয়া একজন ছাত্র গত ১ বছরে ৩৪০টি সিনেমা দেখেছেন। এটা আপনার কাছে অবাক করার মতো ঘটনা মনে হতে পারে। কিন্তু কখনোই সেটা সংবাদ নয়। কারণ এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। মাদ্রাসায় পড়লেও তার ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা রয়েছে। তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে হয়তো এই প্রতিবেদনটা আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে বেশী আলোচনায় আসতে পারে। কিন্তু এতেকরে ওই মাদ্রাসা ও সে ছাত্রের পুরো শিক্ষা জীবনটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
জেলা প্রশাসকের উদাহরণ টা দিয়েছিলাম এজন্যে যে তিনি এ পদে একজন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। জেলার বিভিন্ন বিষয়ে তাকে এধরণের ফাইলে স্বাক্ষর করতেই হয়। এটা নিয়মিত ঘটনা। এটা তার রুটিন কাজের মধ্যেই পরে এবং এর জন্য তিনি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। তাই সেটা কখনোই সংবাদ হতে পারেনা। আর যেসব ঘটনা আপনার গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে প্রচার হওয়ায় দেশসহ নাগরিকদের ক্ষতি হতে পারে সেসব ঘটনা কেবল ঘটনাই থাকা উচিত। কখনো কোন পাঠকও সেগুলোকে সংবাদ হিসেবে আশা করেন না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অসংখ্য গুজব ছড়িয়ে পরতে পারে। একজন সংবাদকর্মীর উচিৎ একটা ঘটনাকে সংবাদে রুপ দেয়ার আগে কমপক্ষে ৩টি মাধ্যমে সেই ঘটনার ব্যপারে আরও একবার জেনে নেয়া। পাশাপাশি যে কোন ঘটনা সংবাদে রুপ দেয়ার আগে আবারও ভেবে নিতে হবে।
গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোতে বা সংবাদকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে দেরিতে সম্পাদিত হলেও একটা নির্ভুল সংবাদ সকল পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতার শীর্ষে জায়গা করে নেয়। দ্রুত করতে গিয়ে সমালোচিত হওয়ার চেয়ে বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যবহুল ও পুর্নাঙ্গ সংবাদ পরিবেশন করে পাঠক ও দর্শক নির্ভরতার জায়গাটা আপনাকে তৈরী করে নিতে হবে।– মো. আমিনুল ইসলাম।
Editor: sunamganj24.com