বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আজীবন সম্মাননা পেলেন জনাব ওসমান গণি ও শফিকুর রহমান মধু মিয়া বৃষ্টির ধারায় মুছে যাক “রোজা রাখি, আল্লাহর হুকুম পালন করি, নিজে সুস্থ থাকি অপরকে সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করি” মঙ্গলকাটা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ‘MCTC’র এক যুগ পূর্তিতে আনন্দ ভ্রমণ ফেনিবিল ও কোনাপাড়া সমাজকল্যাণ যুব সংঘের অমর একুশে উদযাপন ‘আব্দুল গণি ফাউন্ডেশন’ মেধাবৃত্তি পরিক্ষা-২২ এর বৃত্তি প্রাপ্তদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের ডলুরা বর্ডারহাটে অনিয়ম ও মাদক বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত তৃতীয় বারের মত অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দাখিল ২০০৪ ব্যাচ এর মিলনমেলা কোনাপাড়া সমাজকল্যাণ যুব সংঘের শীত বস্ত্র বিতরণ

`সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে’ -মাওলানা কাজী ফজলুল করীম

`সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে’ -মাওলানা কাজী ফজলুল করীম

[বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, গত ৫ নভেম্বর বগুড়ার নন্দীগ্রামে ঋণের দায়ে আজহার আলি নামে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। তিনি বিভিন্ন এনজিও এবং গ্রামের কিছু সুদ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে সুদের টাকা জোগার করতে না পেরে নিরুপায় হয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। ইসলাম টাইমস-এর পক্ষ থেকে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলি বগুড়ার শামসুল উলুম কারবালা মাদরাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা কাজী ফজলুল করিমের সঙ্গে। তার সেই কথামালা নিয়ে এই মুখকলাম।]

 

এক জাতীয় জিনিস কমবেশি করে লেনদেন করাকে সুদ বলে। ভিন্ন জিনিসে কমবেশি করে লেনদেন করলে সুদ হয় না। সুদের কারবারটা ব্যাপকভাবে হয় টাকা কমবেশি করে লেনদেন করার মাধ্যমে। যেমন কারও থেকে এক হাজার টাকা নেওয়া হলো। তাকে এগারো শ বা তার বেশি দেওয়া হবে এই শর্তে। এ ধরনের লেনদেনকে সুদ বলে।

সুদের গুনাহ মারাত্মক। এটা ব্যভিচারের চেয়ে জঘন্য। এক হাদিসে আছে, সুদের গুনাহের ৭০টা স্তর রয়েছে। এর মধ্যে নিম্নপর্যায়ের হলো, নিজের মায়ের সাঙ্গে ব্যভিচার করা। নাউজুবিল্লাহ। মুসনাদে আহমাদ কিতাবে আছে, যে এক দেরহাম পরিমাণ সুদ ভোগ করল, সে যেন ৩৬ বার ব্যভিচার করল।

দেখুন, হুজুর সা. অত্যন্ত ভদ্রভাষী ছিলেন। তারপরও সুদের গুনাহের ভয়াবহতা বুঝাতে তিনি এটাকে ব্যভিচারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। জিনা-ব্যভিচার যেমন অবৈধভাবে সুখলাভের একটা রাস্তা, তেমনি সুদও অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার একটা রাস্তা। জিনাকে সমাজের মানুষ যেমন ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে সুদকেও যেন এমন ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে এ জন্য নবীজি সা. সুদকে জিনার সঙ্গে তুলনা দিয়েছেন।

সারা দেশে ব্যাংকগুলো তো আছেই। বর্তমানে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন সমিতি ও এনজিওগুলোর মাধ্যমে সুদি কারবারের ছড়াছড়ি। তারা গ্রামের মানুষদের মধ্যে সুদি লেনদেন করছে। একজন মানুষের টাকার প্রয়োজন হওয়ার পর কোথাও না পেলে সে সুদে টাকা নেয়, নিতে বাধ্য হয়। সুদি কারবার থেকে সমাজকে বাঁচানোর জন্য এসব সুদি প্রতিষ্ঠানকে সচেতন করতে হবে। দীনদার মুসলমানদের উদ্যোগে সুদমুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে।

সুদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝাতে হবে, আপনারা মানুষকে সরাসরি টাকা না দিয়ে তাদের যে প্রয়োজন সেই প্রয়োজনটা পূরণ করে দিন। কারণ, মানুষ টাকা নিয়ে কোনো না কোনো কাজে ব্যয় করে। সুদি কারবারে মানুষ যেটা করে, সেটা হলো টাকা নেয় গরু বা জায়গা কিনবে বলে। কিন্তু সেই টাকা পরে খরচ করে অন্য কাজে।

ইসলাম এখানে একটি সহজ ও সুন্দর বিধান রেখেছে। মানুষের যা প্রয়োজন তা পূরণ করতে ইসলাম বলছে। এ জন্য সমিতিগুলোর লেনদেন এভাবে করা দরকার, যার যেটা প্রয়োজন সেটার জন্য টাকা না দিয়ে প্রয়োজন পুরা করে দেওয়া। অর্থাৎ, সমিতিগুলো পণ্য বা দ্রব্য কিনে দেবে। আর সেই পণ্য বা দ্রব্যের ওপর লভ্যাংশ নির্ধারণ করে তাদের কাছে বিক্রি করবে। তখন কোনো অসুবিধা হবে না।

যেমন একজনের গরু বা জমি দরকার। সেটা সমিতির পক্ষ থেকে ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকায় কেনা হলো। এবার গরু বা জমি কিনতে চাওয়া ব্যক্তির কাছে গরুটা ৬০ হাজার বা জমিটা ১ লাখ পনের বা বিশ হাজার টাকায় বিক্রি করল। এই টাকা গ্রাহক কিস্তি হিসেবে দিলেও তখন সুদ হবে না। এভাবে হলে লেনদেন সহি হবে। প্রয়োজনও পুরা হবে। আর সুদি লেনদেনও হলো না। ইসলামসম্মত বিনিয়োগের এটি একটি পদ্ধতি। এ রকম আরও পদ্ধতি রয়েছে।

দেশ ও সমাজকে সুদের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য ওলামায়ে কেরাম কাজ করছেন। সুদের ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে সচেতন করছেন। তারা আগেও বলেছেন; এখন মসজিদ ও মাহফিলগুলোতে আরও বেশি বলা দরকার।

আরেকটা কথা হলো, আগে মানুষ ধার দিতো আবার সঠিক সময়ে পরিশোধও করত। এখন সমাজের বেশিরভাগ মানুষের অবস্থা এমন, কারও থেকে টাকাপয়সা ধার নিলে সঠিক সময়ে পরিশোধ করে না। আর কিছু লোক তো মোটেও পরিশোধ করে না। এভাবে একটা সমস্যা আরেকটা সমস্যা সৃষ্টি করে।

তাছাড়া ইসলামি শিক্ষা না থাকায় মানুষ দিন দিন ভোগবাদী হয়ে উঠছে। দেখা যায় কারও উপার্জন ১০ হাজার টাকা, সে খরচ করে ১২ হাজার টাকা। আমাদের সামনে থাকা উচিত সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগমুখি জীবন।

আল্লাহ তায়ালা সুদের কুফল সম্পর্কে বলছেন, ‘তোমাদের সম্পদশালীদের মাঝেই সম্পদ জমা হয়ে যাবে।’ কারণ, যারা সুদি লেনদেন করে, এদের তো কোনো লস নেই। এদের পাল্লায় টাকা শুধু আসতেই থাকে। আর যারা সুদে টাকা নেয়, তারা নেয় কম, দেয় বেশি। এ জন্য সমাজে একটা শ্রেণিবৈষম্য তৈরি হয়। তাই সুদি লেনেদেনে ধনীরা শুধু ধনী হতে থাকে আর গরিবরা কেবল গরিব হতে থাকে। সুদ সমাজে এই শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি করে।

দ্বিতীয় কথা হলো, একশ্রেণির মানুষ যখন শুধু ধনী হয় আরেকশ্রেণির মানুষ শুধু গরিব হয়, তখন সমাজে হিংসা, চুরি-ছিনতাই, খুন-রাহাজানির মতো অপরাধগুলো বাড়তে থাকে। লাগামহীন বাড়তে থাকা সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে। গণমাধ্যমে এসব সংবাদ আসছে। সুদ এভাবেই সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করে।

কেউ কেউ মনে করেন, সুদ তো তেমন খারাপ কিছু না। এটা টাকার বিনিময়ে ইন্টারেস্ট বা লভ্যাংশ। দেখুন, এই বিষয়টাও লক্ষণীয়। শরয়ি কোনো বিষয়ের নাম পরিবর্তন যেন না হয় এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। শরিয়তে নিষিদ্ধ কোনো বিষয়ের নাম পরিবর্তন অনেক সময় গুনাহের ভয়াবহতাকে মানুষের দৃষ্টিতে হালকা করে দেয়। যেমন সুদকে মানুষ যতটা খারাপ মনে করে, ইন্টারেস্টকে অতটা খারাপ মনে করে না। অনেকে সুদ বলতে ইতস্তত বোধ করে কিন্তু ইন্টারেস্ট বা লাভ বলতে ইতস্তত বোধ করে না। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার।

সুদকে ইন্টারেস্ট, লাভ, লভ্যাংশ যে নামেই পরিবর্তন করা হোক না কেন, সুদকে আমাদের সুদই বলতে হবে। সুদ শব্দের ভেতরে যে একটা ঘৃণা আছে, এটা যেন সমাজ থেকে উঠে না যায়।

অনুলিখন : সাদ আবদুল্লাহ মামুন

islamtimes


আপনার এ্যাড দিন

ফটো গ্যালালি

Islamic Vedio

বিজ্ঞাপন ভিডিও এ্যাড




© All rights reserved © 2018 angina24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com